বান্দরবানের রুমায় গুলিতে নিহত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য বেনেট থাং ম্রোকে পরিবারের অবাধ্য হওয়ায় এক বছর আগে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর তাঁর কোনো খোঁজ জানতেন না পরিবারের সদস্যরা।
আজ সোমবার দুপুরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ছেলে বেনেট ম্রোর লাশ নিতে যান বাবা লিপমাং ম্রো। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, গত শনিবার দুপুরে রুমা উপজেলার বাসত্লাং ও আর্থাপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দলের ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে নিহত হন বেনেট ম্রো। গতকাল সকালে পুলিশ ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে কেএনএফের ইউনিফর্ম পরা বেনেটের লাশ উদ্ধার করে।
এ সময় লাশের পাশে একটি দোনলা বন্দুক ও ৭০টি গুলি পাওয়া যায়। রুমা থানা থেকে জানানো হয়েছে, বেনেট ম্রো কেএনএফে যোগ দিয়েছিলেন। গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বান্দরবান সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বেনেট ম্রোর লাশ তাঁর বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে।
জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী, বেনেট থাং ম্রোর বয়স ১৯ বছর। তাঁর বাবা ম্রো ও মা বম জেনগোষ্ঠীর। তাঁদের বাড়ি জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের শ্যারণপাড়ায়। ওই পাড়ায় বম জনগোষ্ঠীর বসবাস হলেও দুটি ম্রো পরিবার থাকে। তাঁরা ম্রো ভাষা জানে না বলে বম ভাষায় কথা বলে।
বেনেটের বাবা লিপমাং ম্রো প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। পরিবারের কারও কথা শুনতেন না। নিজে নিজে বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নিতেন। এক বছর আগে ঘুষি মেরে তাঁর দাঁত ভেঙে দিয়েছিলেন বেনেট। তখন তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ রাখতেন না।
পাইন্দু ইউনিয়নের একাধিক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুয়ালপিপাড়া এলাকায় কেএনএফের একটি দল প্রায় এক মাস ধরে গোপনে অবস্থান করছিল। গত শুক্রবার থেকে তাঁরা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আর্থাপাড়া, বাসত্লাংপাড়া, মুননুয়ামপাড়া, হ্যাপিহিলপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার চেষ্টা করে আসছিল।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা প্রথম আলোকে বলেন, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে মুননুয়ামপাড়া, আর্থাপাড়া, বাসত্লাংপাড়া, হ্যাপিহিলপাড়া ও মুয়ালপিপাড়ার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। আজ দুপুর পর্যন্ত ৫৮টি বম ও ৫২টি মারমা পরিবার উপজেলা সদরে এসে পৌঁছেছে। অন্য পরিবারগুলো কোথায় রয়েছে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।