নির্বাচনকালীন পুলিশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আওতায় থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে পুলিশ। আমি আশা করি, নির্বাচন কমিশন যেমন চাইবে, পুলিশ তেমনই জনগণকে সেবা দেবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের মুলাদী থানার আধুনিক ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে মুলাদী আসেন এবং থানার পাশের একটি মাঠে অবতরণ করেন। এরপর পুলিশের সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন। তিনি থানার নবনির্মিত ভবনের ফলক উন্মোচন করেন এবং পরে ভবনটি পরিদর্শন করেন। এরপর থানার সামনে সুধী সমাবেশে অংশ নেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ যথার্থই মর্যাদাশালী দেশে পরিণত হয়েছে। যেসব দেশ আমাদের দেশকে গরিব বলে একদিন তুচ্ছ করত, তলাবিহীন ঝুড়ি বলত আজ সেসব দেশের নেতারাই বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যোগ্যতর নেতার কাছে দেশের নেত্বত্ব থাকলে একটি দেশের ভাগ্য যে বদলে যায়, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উদাহরণ।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, মুলাদী থানার মতো একই নকশায় দেশের ১০১টি থানা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, এসব থানায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি হেল্প ডেস্ক থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যে আধুনিক পুলিশ বিনির্মাণ হচ্ছে, তার সব সুযোগ-সুবিধা এসব থানায় থাকবে। এখানে নারী-শিশুসহ সব মানুষের আইনি সেবা নিশ্চিত করা হবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক নির্মূলে কাজ করছি। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে সফলতা এনেছে। জঙ্গিরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, সিলেটেও কয়েকজন জঙ্গির নাম এসেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ তৎপর। শুধু দক্ষিণাঞ্চলে নয়, সারা দেশে তারা যেখানেই থাকুক না কেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে।
মুলাদী থানার নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য শাহে আলম তালুকদার, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া, সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না, সংরক্ষিত নারী আসন-২৮ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. সাদেকুল আরেফিন, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তুষার কুমার মন্ডল জানান, উপজেলার পৌরসভার তেরচর এলাকায় ২ একর ৬০ শতাংশ জমির ওপর ১৮৯৯ সালে মুলাদী থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরোনো হয়ে পড়ায় ওই ভবন বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এরপর পৌরসভা এলাকায় একটি বহুতল বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলছিল থানার কার্যক্রম। এতে ভাড়া বাড়িতে হাজতি রাখা থেকে শুরু করে সেবা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। নতুন ভবন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সব ধরনের সমস্যার সমাধান হবে।
৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ভবনের সামনের খোলা জায়গায় ফুলের বাগান করা হয়েছে। ভবনের চারতলায় ৮০ জন পুরুষ পুলিশ সদস্য বসবাস করতে পারবেন। তিনতলার আটটি কক্ষে থাকবেন নারী পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি নিচতলা ও দোতলায় থাকছে সেবাগ্রহণকারীদের অভ্যর্থনা কক্ষ, নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক, সেবা প্রদান কক্ষ। পরিদর্শকদের জন্য পৃথক কক্ষ, উপপরিদর্শক কক্ষ, কনফারেন্স কক্ষ, বেতার কক্ষ, সেবাগ্রহণকারীদের জন্য ওয়েটিং রুম, অস্ত্রাগার, পর্যবেক্ষণ ও সাক্ষাৎকার কক্ষ করা হয়েছে নতুন এই ভবনে।
ভবনে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীদের জন্য পৃথক হাজতখানা রয়েছে। ওই চার কক্ষে ৭০-৮০ জন আসামিকে রাখা যাবে। থানা ভবনে থাকছে প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষ।