‘আইতোত কম্বলকোনা গাওত দিয়া আরাম করি নিন পারব্যার পামো’

কম্বল পেয়ে খুশি শ্রীপুর গ্রামের সন্ধ্যা রানী। শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কামারজানি ইউনিয়ন। প্রায় ২০ হাজার জনসংখ্যা-অধ্যুষিত এই ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা ভাঙনকবলিত। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এসব গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ গরিব, অসহায়। প্রতিবছর নদীতে আবাদি জমি ভেঙে চর জেগে উঠছে। একসময়ের গৃহস্থরা এখন নদীভাঙনে নিঃস্ব। সেই কামারজানির গোঘাট গ্রাম থেকে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল নিতে এসেছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধ প্রণব চন্দ্র চক্রবর্তী (৮২)। একটি কম্বল তাঁর হাতে তুলে দিতেই মুখে হাসি ফোটে।

প্রণব চন্দ্র বলেন, ‘হামারঘরে শীতের কাপড়া দুইখ্যান পুরানে খ্যাতা (কাঁথা)। তাক দিয়া কোনোমতন আইত কাটাই। সারা আইত একাত-ওকাত হই। শীতের জন্যে নিন (ঘুম) ধরে না, বাবা। শীতের কাপড়া কিনমো ক্যামন করি, খাবার চাউল কিনব্যার পাইনে। আচকে তোমারঘরে পোত্তম আলোর কম্বলকোনা প্যায়্যা ভালো হলো। আইতোত কম্বলকোনা গাওত দিয়া আরাম করি নিন (ঘুম) পারব্যার পামো।’

সকাল থেকেই কম্বলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন একই গ্রামের সৌদিনী দাস (৮০)। দুপুরে কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, ‘এ্যাকনা কম্বলের জন্যে ম্যালাজনের বাড়িত গেচিনো। সগলে কয়, হামরা কোনটে থাকি দ্যামো। সোরকার দিবে। তোমারঘরে পোত্তম আলোর কম্বল প্যায়া উপকার হলো, আল্লায় তোমাঘরে ভালো করুক, বাবা।’

আজ শনিবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ১৫০টি পরিবারের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বেলা দুইটার দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চত্বরে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সময় কম্বল পেয়ে প্রণব চন্দ্র চক্রবর্তী ও সৌদিনী দাসের মতো অসহায় শীতার্ত মানুষেরা স্বস্তি প্রকাশ করেন।

এর আগে গাইবান্ধা বন্ধুসভার সদস্যরা গতকাল শুক্রবার গ্রামে গ্রামে ঘুরে শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করে স্লিপ বিতরণ করেন। সেই স্লিপ নিয়ে শীতার্ত ও বয়স্ক নারী-পুরুষেরা কম্বল নিতে হাজির হন।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী গোঘাট গ্রাম থেকে কম্বল নিতে এসেছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধ প্রণব চন্দ্র চক্রবর্তী

কামারজানির কড়ইবাড়ি গ্রাম থেকে কম্বল নিতে এসেছিলেন সাইবানি বেগম (৫৫) ও আমেনা বেগম (৫৮)। কম্বল পেয়ে সাইবানি বেগম বলেন, ‘তিন বচর থাকি কোনো সরকারি কম্বল পাই নাই। আচক্যা তোমারঘরে আলোর কম্বল পানো। ছোট নাতিটা শীতের কষ্টে নিন (ঘুম) পারব্যার পায় না। অ্যাচকা রাতোত নাতিটাক নিয়্যা ঘুম পারব্যার পামো।’ আমেনা বেগম বলেন, ‘সন্দ্যাত থাকি আগুন জ্বলেয়া থাকি। সোয়ামিক কোছিলাম একটা কম্বল আনার জন্যে। কিন্তু তায় কিনি আনব্যার পায় নাই। তোমরা হামাক কম্বল দিবার আচ্চেন, আল্লায় তোমার ঘরে ভালো করুক।’

শ্রীপুর গ্রামের সন্ধ্যা রানী (৬০) বলেন, ‘হামারঘরে সোংসারোত দুইকোনা মানুষ। কিন্তু সগলের শীতের কাপড়া নাই। দুকনে চিরে খ্যাতা আর এ্যাকনা কম্বল দিয়া আইত কাটাই। হামারঘরে বাড়ি দূরোত দেকি কাউয়ো কম্বল দিব্যার আইসে না। তোমরাঘরে জারের মদ্দে কম্বল দিব্যার আচ্চেন, তোমারঘরে ভালো হবে।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে কম্বল বিতরণ করা হয়। শনিবার দুপুরে

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন কামারজানি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মাহবুবুর রহমান, সংস্কৃতিকর্মী সাদ্দাম হোসেন, গাইবান্ধা প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি ইমরান মাসুদ, সহসভাপতি জিসান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উম্মে হাবিবা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, পাঠচক্র সম্পাদক শামীমা আক্তার, দপ্তর সম্পাদক শিউলি আক্তার, সদস্য জিয়াউর রহমান, আশরাফী জাহান, প্রথম আলোর গাইবান্ধা প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন প্রমুখ।

প্রথম আলো ট্রাস্টের এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড (কনকা)। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অনুদানের টাকায় কেনা কম্বল অসহায় শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন। ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্টে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৯ টাকা অনুদান এসেছে।