সিলেটে আরও তিন মামলা, সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ২২৭ জন আসামি

বাঁ থেকে—সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটির সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
ফাইল ছবি

সিলেটে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগে আরও তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আজ বুধবার দুপুরে মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। অপর মামলাটি গতকাল মঙ্গলবার আদালতে করা হয়।

গত দুই দিনে হওয়া ওই তিন মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, শফিউল আলম চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ২২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় আজ দুটি মামলা হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুনু মিয়া। তিনি জানান, নগরের নয়াসড়ক এলাকার বাসিন্দা মো. আক্কাছ আলী নামের এক ব্যক্তি ১১১ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে। এ ছাড়া নগরের ঝালোপাড়া এলাকার নিখিল চন্দ্র কর ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। তাঁর করা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি ৫০ থেকে ৬০ জন।

নিখিল চন্দ্র করের মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন, ৫ আগস্ট বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে নগরের কিনব্রিজ এলাকার আলী আমজাদের ঘড়ির পাশে আসামিরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁকে মারধর করে গুরুতর জখম করেন। এই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও ইমরান আহমদ চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান।

এ ছাড়া নিখিল চন্দ্রের মামলায় সিটি করপোরেশনের তিন কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান, আজাদুর রহমান ও তাকবিরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, দক্ষিণ সুরমা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সামছুল ইসলাম মামলায় আসামি করা হয়েছে।

আক্কাছ আলীর করা মামলায় সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদকে প্রধান আসামি করেছেন। এই মামলার অপর আসামিরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান, সিলেট মহানগর প্রজন্ম লীগের সভাপতি এস এম আলী হোসেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল বাছিত ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ।

গতকাল সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম ও দ্রুত বিচার আদালতে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। কুমিল্লার বাসিন্দা মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে ওই মামলা করেছেন। এই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ জনকে। এই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী, যুবলীগের নেতা আলম খান প্রমুখ। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ৪ আগস্ট সিলেট নগরের বন্দরবাজার মধুবন মার্কেটের সামনে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে তিনিসহ একাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সিলেটে আরও তিনটি মামলার আবেদন

সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় গতকাল আদালতে তিনটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন নগরের সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ। মামলার আরজিতে বলা হয়, ৪ আগস্ট দুপুরে সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিবর্ষণ করা হয়। আদালত অভিযোগ তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল সিলেট জেলা খেলাফতে মজলিসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪ আগস্ট বিকেলে সুবিদবাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ ও হামলার অভিযোগে মামলার আবেদন করেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ, অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক দস্তগীর কাউসার, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসিসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করা হয়। এই মামলায় ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

বাদীর আইনজীবী মো. সায়েম খান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের বিচারক মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিলেট নগরের খারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাজন আহমদ নামের এক ব্যক্তি আরেকটি মামলার আবেদন করেছেন। মামলার আরজিতে ৪ আগস্ট দুপুরে সোবহানীঘাট এলাকায় হামলা ও গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে আসামি হিসেবে সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার জাকির হোসেন খান, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ৫৯ জনের নাম উল্লেখ কো হয়। এতে অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।