বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মির’ গোলাগুলি চলছে। রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ে একপক্ষ আরেক পক্ষের ঘাঁটি ও চৌকি দখল-বেদখলের ঘটনায় গোলাগুলি অব্যাহত আছে। পাহাড়-জঙ্গলে আরাকান আর্মির লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর জেট ফাইটার ও হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া হচ্ছে বোমা ও মর্টার শেল।
চার দিন ধরে জেট ফাইটার ও হেলিকপ্টারের ওড়াউড়ি দেখা যায়নি। তবে সকাল থেকে রাত পযন্ত মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের পাশাপাশি পাহাড়ের চৌকি থেকে ছোড়া হচ্ছে আর্টিলারি ও মর্টার শেল। এতে ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ে বসবাসরত মুরং ও চাকমা সম্প্রদায়ের কয়েক শ বসতি ধ্বংস হয়েছে। তারা দুর্গম পাহাড়ি পথ দিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্তের বাইশফাঁড়ি, তুমব্রু হেডম্যানপাড়ায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার সীমান্ত সিল করে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমারের কেউ বাংলাদেশ ঢোকেনি। এ সুযোগ দেওয়া হবে না। সীমান্তজুড়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় আছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এপারের মানুষ আতঙ্কে আছেন। মিয়ানমারের কেউ যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা আছে।
দুই দিন ধরে সীমান্তে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আজ ভোর থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সকাল ছয়টা থেকে গোলাগুলি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গুলির সঙ্গে থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছিল মর্টার শেল।
তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা ও ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টু প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির মধ্যে ওপারের (মিয়ানমার) গোলাগুলি চলছে। গুলির বিকট শব্দ এপারে আসছে। আতঙ্কে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন না এলাকার মানুষ।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শফি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল–বিকেল কিংবা রাতের হিসাব নেই, ওপারে গোলাগুলি হচ্ছে। গোলাগুলিতে নাইক্ষ্যংছড়ির মানুষ উদ্বিগ্ন। চাষাবাদসহ স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিঘ্ন ঘটছে। উপজেলার ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটারের দুর্গম ও পাহাড়ি স্থল সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।