ছাত্রদলের মিছিলের পর যুবলীগের হামলার অভিযোগ, ‘পালাতে গিয়ে’ মাইক্রোবাসের ধাক্কায় নিহত ১

ছাত্রদল নেতারা বলছেন, এই মশাল মিছিলে অংশ নেন অমিত হাসান। গতকাল দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছাত্রদলের মশাল মিছিলের পর মিছিলকারীদের ওপর যুবলীগের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় সময় ‘পালাতে গিয়ে’ মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মো. অমিত হাসান (১৮) নামে এক ছাত্রদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। যুবলীগ নেতা-কর্মীদের হামলায় আরও আটজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল নেতারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অমিতের মৃত্যু হয়। তিনি রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। অমিত কাঞ্চন পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহসভাপতি বলে জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাহিদ হাসান ভূঁইয়া।

ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলা ছাত্রদল একটি মশাল মিছিল করে। মিছিলটি ভুলতা চৌরাস্তা থেকে শুরু হয়ে এশিয়ান হাইওয়ের মুন্সির পাম্প এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

অমিতের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে আসা বিএনপি নেতাদের কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা আমির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাহিদ হাসান বলেন, মিছিল শেষে নেতা-কর্মীরা যে যাঁর মতো বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিকদারের নেতৃত্বে ৭ থেকে ৮টি মোটরসাইকেলে করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিলকারীদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের হাতে রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা ছিল। হামলা থেকে বাঁচতে নেতা-কর্মীরা যে যাঁর মতো করে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছিলেন। অমিত দৌড়ে পালানোর সময় দুটি মোটরসাইকেল তাঁকে তাড়া করে। এ সময় দ্রুতগতির একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে অমিতের ধাক্কা লাগে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের ছেলেরা মশাল মিছিল বের করছিল। তাঁরা মোটরসাইকেলে করে ৫০–৬০ জনের একটা দল মিছিলকারীদের ধাওয়া দেন।

পালাতে গিয়ে অমিত হাসানের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা খালি হাতে ছিলাম। সে কারণে ধাওয়া দিয়ে বেশি দূর আগাইনি। আমাদের ধাওয়া খেয়ে মিছিলকারীরা গাউছিয়া মার্কেটের ভেতরে চলে যায়। এমন কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে আমাদের জানার কথা।’

রূপগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) অলি উল্লাহ রাত ৩টায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানতে পেরেছি ভুলতায় প্রাইভেট কারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।’

অমিত মাথা ও পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হামলায় অন্তত আরও আটজন আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন, ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি আবু হানিফ, সহসাধারণ সম্পাদক অপু মিয়া, আমির হোসেন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি রাশেদুল মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হৃদয় মীর, কাঞ্চন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হালিম ও একই ওয়ার্ডের ছাত্রদল কর্মী সানি মিয়া। তাঁদের মধ্যে আবু হানিফ ও অপু মিয়া রূপগঞ্জের পৃথক দুটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

জেলা যুবদলের সভাপতি গোলাম ফারুক অভিযোগ করেছেন, যুবলীগ–ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরা কেবল ধাওয়া করেই থেমে যায়নি। রাতে তারা কয়েকজন নেতা–কর্মীর বাড়িতেও হামলা চালিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অতীতে দেখা গেছে যে যতো বেশি হামলা করতে পারে সে ততো ভালো পদ–পদবী পায়। সে কারণে হামলার পর হামলাকারীরা সেসব ঘটনা অকপটে স্বীকারও করে।’