কুমিল্লার মুরাদনগর ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মিলে অবস্থান ডালপা বিলের। এর সৌন্দর্য দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন
কুমিল্লার মুরাদনগর ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মিলে অবস্থান ডালপা বিলের। এর সৌন্দর্য দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন

কুমিল্লার ডালপা বিলে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

কুমিল্লা শহর থেকে উত্তর–পশ্চিমে দুই ঘণ্টার পথ। সে পথ পার হলে চোখে পড়ে পুরোনো কিছু দোতলা বাড়ি। আরেকটু এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে বিশাল জলরাশি। মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়ন। সেখানে আছে বিশাল জলরাশির ডালপা বিল। বিলের বুক চিরে কাঁচা মাটির পথ চলে গেছে এঁকেবেঁকে। এই মাটির পথে এসে ধাক্কা দেয় দুই পাশের পানির ঢেউ। রাস্তার একপাশে ৬০০ একর, আরেক পাশে ৪০০ একর মিলে মোট ১ হাজার একর জমি নিয়ে বিস্তৃত এই ডালপা বিল।

বিকেল হলেই এই বিলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন হাজারো দর্শনার্থী। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র—এই তিন মাস বিলটি কানায় কানায় পূর্ণ থাকে।

বিলের সিংহভাগ মুরাদনগর উপজেলায়। মুরাদনগরের মানুষ বিলটিকে ডালপা বিল নামে চেনে। আর বাকি অংশটা ব্রাহ্মণপাড়ার মুকিমপুরে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মানুষজন মকিমপুর বিল হিসেবে চেনে।

শনিবার ছুটির দিন বিকেলে দেখা যায়, সহস্রাধিক দর্শনার্থী ঘুরে ঘুরে বিলের সৌন্দর্য দেখছেন। তাঁরা কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা প্রিয় মানুষকে নিয়ে এসেছেন বিল দেখতে।
বিলে বেড়াতে এসেছিলেন ৩ নম্বর আন্দিকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এই বিলের বয়স ৫০ বছরের বেশি হবে। তবে তিন থেকে চার বছর ধরে বিলটি মানুষের কাছে খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে। বছরের এ সময়টায় হাজারো দর্শনার্থীর পদভারে মুখর হয় বিলটি। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কুমিল্লা নগরী থেকে পরিবার নিয়ে আসা আবদুল হালিম নামের একজন বলেন, ব্যবসার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সময় পেলে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসেন। ফেসবুকে ডালপা বিলের সৌন্দর্য দেখে ঘুরতে এসেছিলেন। বিলের সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তবে পর্যাপ্ত নৌকা নেই দেখে তাঁর মন খারাপ।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আবু শাহারিয়া তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ডালপা বিল সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবে এখানে খাবারের ভালো আয়োজন নেই। পর্যাপ্ত নৌকাও নেই। এসবের আয়োজন থাকলে খুব ভালো লাগতো।
নৌকায় দর্শনার্থীদের বিল ঘুরিয়ে দেখানো যুবকেরা বলেন, তাঁরা প্রতি ঘণ্টা নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য চার শ টাকা ভাড়া নেন। তবে নৌকা কম থাকায় তাঁদের চাহিদা খুব বেশি।

বিল ঘিরে বাজার গড়ে উঠেছিল। এখন বিলের নৌপথে যাতায়াত কমে যাওয়ায় বাজারগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে

স্থানীয় আবদুল মতিন বলেন, বিলটিকে কেন্দ্র করে কুটি, কালীগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, বাঙ্গরা, বাঞ্চারামপুর, নবীনগর ও সংচাইল বাজার গড়ে উঠেছিল। প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা বিলের মাঝখান দিয়ে যাতায়াত করতেন। এখন বিলটি দিয়ে নৌপথে যাতায়াত কমে যাওয়ায় বাজারগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

ডালপা বিল পল্লী মঙ্গল সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, বছরের এই সময়ে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ হাজার মানুষ এই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হলে বিলকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটনকেন্দ্র।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ডালপা বিলে পর্যটনের সুবিধা বাড়াতে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান জানান, বিলের বিষয়ে তিনি শুনেছেন। যদি সেখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কোনো সুযোগ থাকে, তাহলে জেলা প্রশাসন থেকে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।