বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ ফেরিঘাটে ফেরি ছাড়তে দেরি হওয়ায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার রাতে আড়িয়াল খাঁ নদের ওই ফেরিতে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া ওই নবজাতকের বাবা সাব্বির হোসেন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। গতকাল সোমবার রাতে সাব্বির তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।
আক্ষেপ করে সাব্বির লেখেন, ‘মীরগঞ্জে ফেরি ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বন্ধ রেখে আমার সুস্থ ছেলেটার প্রাণ কেড়ে নিল। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের ফেরি ছেড়েছে ৮টা ২০ মিনিটে। মেডিকেল থেকে সুস্থ অবস্থায় আমার নবজাতক ছেলেটাকে রিলিজ দিয়েছিল, অ্যাম্বুলেন্সে বাড়িতে নিয়ে আসছিলাম। পিতার চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু যে কত কষ্টের তা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না...। এই ফেরি সিন্ডিকেটের কারণে মরে গেল আমার নিষ্পাপ ছেলেটা...। ফেরির ইজারাদার অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন মামার স্ত্রী...। দীর্ঘ বছর তাঁর (রফিকুল) সঙ্গে রাজনীতি করেছি। আজ তাঁরই ইজারাকৃত ফেরির স্টাফদের কারণে আমার নিষ্পাপ ছেলেটার প্রাণ চলে গেল।’
সাব্বির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১৪ আগস্ট বরিশালের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর ছেলেসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। ২১ আগস্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে ওই দিন সন্ধ্যায় নবজাতক নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি মুলাদীর উদ্দেশে রওনা দেন। অ্যাম্বুলেন্সে তাঁর স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজন ছিলেন। মীরগঞ্জের ফেরি ছেড়ে যায় ৬টা ৪০ মিনিটে। ফেরি ছাড়ার আগেই ঘাটে পৌঁছান এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ ফেরিতে ওঠেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরও ফেরিটি ছাড়ছিল না। তিনি বারবার অনুরোধ করলে ফেরিঘাটের ইজারাদারের লোক সাইফুল ক্ষেপে গিয়ে তাঁকে শাসান। নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর ফেরিটি ঘাট ছাড়ে।
সাব্বির অভিযোগ করে বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ ফেরিতে আটকে থাকায় অস্বাভাবিক গরমে চোখের সামনেই ছটফট করতে করতে আমার সন্তান মারা যায়। আমি কিছুই করতে পারিনি। সাইফুলের কাছে ফেরি আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি দলবল নিয়ে আমাকে মারতে আসেন। উপস্থিত লোকজন তখন আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দেন।’
সাব্বির উল্লেখ করেন, ‘এই ফেরির ইজারাদার যিনি, তাঁর সঙ্গে আমি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। বর্তমানে তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলামের স্ত্রী। রফিকুল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদেও আছেন। আমি তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা একটি ফেরিঘাটে অবহেলায় মানুষের মৃত্যু হবে, এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কারও মৃত্যুই দুঃখজনক। তাঁর (সাব্বির) বাচ্চাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি যত দূর জেনেছি, সাব্বির ফেরিতে ওঠার পর জানতে চান, ফেরি ছাড়তে কত দেরি হবে। তখন ফেরির লোকজন তাঁকে জানান, ১০ মিনিট। এরপর তিনি বাজার করতে গিয়েছিলেন। এতে ফেরির দোষ কী? আর আমার নামে ফেরির ইজারা থাকলেও মূলত ইজারা নিয়ে ওখানে তিন পক্ষের দ্বন্দ্ব থাকায় তিন পক্ষ একমত হয়ে আমার নামে ইজারা নিয়েছে। এতে আমার কোনো লাভ-লোকসান নেই, শুধু নামেই আমার।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বরিশালের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ফেরি) মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তবে তাঁরা ফেরির মেকানিক্যাল বিষয়টি দেখভাল করেন। রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি দেখভাল করে রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছেন না।
পরে সওজের বরিশাল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁকে কেউ জানাননি। তাঁরা ফেরির সময়সূচি নির্ধারণ করে দেন। সেই অনুযায়ী ইজারাদারের ফেরি পরিচালনার কথা। সেখানে ব্যত্যয় হয়েছে কি না, সেটি তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখবেন।