সাড়ে ৭ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৩০০ মিটারে ইট বিছানো রয়েছে। বাকি অংশ কাঁচা। বর্ষাকালজুড়ে কাঁচা অংশটি কাদাজলে বেহাল থাকে। কাদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় বাসিন্দাদের। এমনই অবস্থা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা আশ্রয়ণপাড়া সড়কের। সড়কটি দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণে পুটিবিলা এম চর হাট। সেখান থেকে আরও পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে পুটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দা গ্রামে অবস্থিত সড়কটি। সড়কটি পুটিবিলা হাসনাভিটা সেতু এলাকা থেকে শুরু হয়ে উত্তর দিকে পহরচান্দা গ্রামের ভেতর দিয়ে পুটিবিলা খনিরপাড়া এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৫ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ সড়কটি নির্মাণ করে। পরে সেটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত হয়। সড়কটি দিয়ে পহরচান্দা গ্রামের আশ্রয়ণপাড়া, নতুনপাড়া, হানিফারপাড়া, আদর্শপাড়া, খনিরপাড়া ও মাঝেরপাড়া এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াত করেন।
গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টিতে সড়কটির বিভিন্ন স্থানের মাটি সরে গেছে। কোনো কোনো অংশে হাঁটুসমান কাদা। সড়কে যানবাহন চলাচল দূরে থাক, হেঁটে চলাও দায়। সরেজমিন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, সড়কটিতে বর্ষায় কাদা আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালু লেগেই থাকে। ফলে সড়কটিতে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগই নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে। বর্ষাকালে, বিশেষ করে রোগীদের সড়কটি দিয়ে হাসপাতালে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই সড়ক দিয়ে গৌড়স্থান উচ্চবিদ্যালয়, কলাউজান গৌড়সুন্দর উচ্চবিদ্যালয়, হাসনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পহরচান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গৌড়স্থান আখতারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসাসহ আশপাশের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত চলাচল করে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, পহরচান্দা গ্রামটি কৃষিনির্ভর। সড়কের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের ৯০ শতাংশই কৃষক পরিবার। ওই গ্রামে আবাদি জমির পাশাপাশি অনেক গবাদিপশুর খামার, মৎস্য খামার ও ফলদ বাগান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় ৬০০ একর জমিতে ধান ও সবজির চাষাবাদ হয়। এ ছাড়া ৭০ একর জমিতে রয়েছে আম, লিচু, মাল্টা, লেবু, কলা, কুল, ড্রাগন, লটকন, রাম্বুটান, পেয়ারা, পেঁপে ইত্যাদি ফলের বাগান। রয়েছে হাঁস–মুরগি, কবুতর, গরু, ছাগল ও মৎস্য খামার। ওই সড়ক দিয়ে কৃষকদের কৃষিপণ্য আশপাশের হাটবাজারে নিয়ে যেতে হয়।
পহরচান্দা কৃষক উন্নয়ন সংঘের সভাপতি খালেদ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের দুরবস্থার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল সংগ্রহ ও বাজারজাত করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন। যথাসময়ে উৎপাদিত ফসল বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে কৃষকদের পরিবহন ব্যয় হয় চার গুণ বেশি। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সড়কটিতে ইট বিছিয়ে চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
পহরচান্দা গ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ ধর বলেন, সড়কের কারণে ওই এলাকার কৃষকেরা লাভের বদলে চাষাবাদ করে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এলাকার কৃষিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা উচিত।
পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন পাঠিয়েছি। সড়কটি চলাচল উপযোগী করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইফরাদ বিন মুনির প্রথম আলোকে বলেন, বরাদ্দ পেলে সড়কটির কাজ শুরু করা যাবে।