বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমরা দেশ স্বাধীন করেছি গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। কোনো রাজা-রানির রাজত্ব করার জন্য নয়। দেশে আজ কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশ আজ হীরক রাজার দেশে পরিণত হয়েছে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। এখন দড়ি ধরে টান মারার সময় এসে গেছে।’
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে খুলনা অভিমুখে রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনারা উদ্দীপ্ত হন, সম্মিলিত হন। ইনশা আল্লাহ, আমরা দড়ি ধরে টান মারব। এই হীরক রাজা আর থাকবে না।’
মির্জা আব্বাস বলেন, দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে, অর্থনীতি খারাপ। ডলারের রিজার্ভ শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে। গত ১৫ বছর দেশে সীমাহীন লুটপাট চলেছে। পি কে হালদারসহ অনেক রাঘববোয়াল হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৯ হাজার কোটি টাকায়। এই চুরিদারির প্রতিবাদ করলে জেলে পাঠানো হচ্ছে। সময়মতো এই চোরদের বিচার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছুদিন আগে দেখা করেছেন বলে বক্তব্যে জানান সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ম্যাডাম কিছু বলবেন? উনি মাথা নাড়লেন, কিন্তু কোনো কথা বললেন না। আমি তাঁর চোখের দিকে তাকালাম। তাঁর চাহনিতে অব্যক্ত ভাষা। তিনি হয়তো এটাই বলতে চেয়েছিলেন, তোমরা আমার জন্য কী করছ? আমি কি দেশের গণতন্ত্র, দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রের জন্য কিছুই করিনি?’
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘আমরা একদফার দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। এই ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলনে শত শত নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তারপরও বিএনপি মাঠ ছাড়েনি। কারণ, একটাই। হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া বিএনপি ঘরে ফিরবে না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান বলেন, ‘আর কত রক্ত দেশের মানুষ দিলে শেখ হাসিনা ক্ষান্ত হবে? এই খুনি জালিম সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত বিদায় না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শয়তানির একটা সীমা আছে। সরকার চোর-ডাকাতদের মুক্তি দিচ্ছে, অথচ তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দিচ্ছে না। সময় থাকতে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দিন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করুন। নইলে মাইর একবার শুরু হলে রেহাই পাবেন না।’
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহদী আহম্মেদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা) অনিন্দ্য ইসলাম, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক সোহরাব উদ্দীন, বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দীন টুকু, কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, মেহেরপুরের নেতা মাসুদ অরুণ, চুয়াডাঙ্গার মাহবুব হাসান খান, শরিফুজ্জামানসহ জেলা ও উপজেলার বিএনপির নেতারা।
ঝিনাইদহ থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চে মাগুরা সদর উপজেলার আলমখালী বাজার থেকে জেলার নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। দুপুর দেড়টার দিকে রোডমার্চটি মাগুরা শহরের ভায়না মোড় হয়ে যশোর অভিমুখে রওনা দেয়। এরপর মাগুরা-যশোর সড়কের শেখপাড়া মসজিদের সামনে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহাসড়কে প্রায় আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পথসভায় মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
বিএনপি নেতারা জানান, মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়ায় আরও একটি পথসভা শেষে যশোর হয়ে খুলনায় যাবে রোডমার্চটি।