রাজশাহীর পুঠিয়ায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার তিনটি স্থানে এই অভিযান চালানো হয়।
এ সময় কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি ইটভাটায় নেওয়ার দায়ে তিনজনকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তাঁরা হলেন, চারঘাট উপজেলার মুক্তারপুরের মো. মামুন, খলিপাপাড়ার মো. শামীম ও নাটোরের বাগাতিপাড়ার সম্রাট আলী। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। মাটিভর্তি একটি ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন পুঠিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কৃষিজমিতে পুকুর খনন বন্ধে গতকাল রাত সাড়ে ১০টা থেকে অভিযান শুরু হয়। প্রথমে উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের হাড়োগাথী বাজারসংলগ্ন বিলে অভিযান চালানো হয়। সেখানে কৃষিজমিতে ১৫ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর খনন করা হচ্ছিল। তবে রাতে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি সেখানে এক্সকাভেটর যন্ত্রও ছিল না।
এরপর উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের কার্তিকপাড়া বাজারসংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানেও কৃষিজমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। ওই এলাকাতে এক্সকাভেটর যন্ত্র পাওয়া যায়। তবে এর চালক বা অন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে রাত ১১টার দিকে পুঠিয়া পৌর এলাকায় অভিযানকালে মাটিভর্তি ট্রাক দেখতে পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। ট্রাকটি পুঠিয়া ইউনিয়নের দুদুর মোড় এলাকার কৃষি জমি থেকে মাটি নিয়ে ইটভাটায় যাচ্ছিল। পরে ট্রাকে থাকা তিনজনকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৫(১) ধারায় ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে তাঁদের জরিমানার টাকা পরিশোধ না করতে হবে। অন্যথায় আইন মোতাবেক তাঁদের ২০ দিনের কারাভোগ করতে হবে।
পুঠিয়া উপজেলায় ধানিজমিতে গত কয়েক বছর ধরেই মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করা হচ্ছে। এসব পুকুরের মাটি ইটভাটায় চলে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি ও মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, পুঠিয়ায় মোট কৃষিজমি ৯ হাজার ৬২৯ হেক্টর। আর ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ৭৬২টি পুকুর। পুকুরগুলোর অধিকাংশই গত কয়েক বছরে খনন করা হয়েছে। এসব পুকুর খনন করতে কৃষি বিভাগ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। যদিও কৃষিজমি সুরক্ষা আইন-২০১৬ (খসড়া)-এর ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনোভাবেই কৃষিজমির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। আর ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ আইনে কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোয় ‘ধানি জমিতে অবাধে পুকুর খনন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, তারা কৃষিজমিতে আইন অনুযায়ী পুকুর খনন বন্ধে কাজ করছে। গত ৯ মাসে এই উপজেলায় মোট ১৭টি মামলা করা হয়েছে; জরিমানা করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ছয়জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নূর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দিন-রাত মিলিয়েই অভিযান চালাচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয় হচ্ছে ঘটনাস্থলে আসামি ও আলামত থাকতে হবে। এগুলো না থাকলে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যকর হয় না। তবে তাঁরা অভিযান অব্যাহত রাখবেন।