ফরিদপুরে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ ও তাঁর ভাইকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা

খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও খন্দকার মোহতেসাম হোসেন
ফাইল ছবি

সাবেক মন্ত্রী ও ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ফরিদপুরের ১ নম্বর আমলি আদালতে এ মামলা করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. দিলদার হোসেন (৫০)। মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিব শেখ মামলার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাসিম মাহমুদ মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ ও তদন্ত করার জন্য ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আরজিতে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের মাঝামাঝি ফরিদপুর-বরিশাল সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পাঁচ বছর পর এ মামলা করা হলো।

বাদী দিলদার হোসেন মামলার আরজিতে বলেন, ঘটনার সময় তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল ফরিদপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। আওয়ামী স্বৈরশাসক সব থানা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করে রাখায় তখন মামলা করতে পারেননি। এ জন্য মামলা করতে বিলম্ব হলো।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন খন্দকার মোশাররফের ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেসাম হোসেন ওরফে বাবর (৭০), শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার নাজমুল হাসান (৫৮), জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (৩৫), জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্ত খান (২৮) ও অমিত সরকার (২১), শহরের আলীপুর মহল্লার বাসিন্দা মো. সাদ্দাম সৌমিক (২৭), কমলাপুরের তারজির হাসান (৩০), অম্বিকাপুরের রবিউল মোল্লা (৪৫), লিটন মোল্লা (৩২) ও শাহীনুজ্জামান (২৮), ফরিদাবাদের সুমন খান (৩৬), ভাটিলক্ষ্মীপুরের সাজিদ খান (২৪), চৌধুরী ডাঙ্গীর জহুরুল শেখ (৩২) ও আতিয়ার শেখ (৩০)।

মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে স্বেচ্ছাসেবক দল ফরিদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ২০০-৩০০ জন নেতা-কর্মী পুষ্পমাল্য নিয়ে গোয়ালচামটে অবস্থিত শহীদ বেদিতে উপস্থিত হন। সকাল ৭টার দিকে তাঁরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। ফিরে আসার পথে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের কাছাকাছি পৌঁছানো মাত্র খন্দকার মোশাররফের নির্দেশে, খন্দকার মোহতেসাম হোসেনের হুকুমে এবং শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে আসামিরা চাপাতি, রামদা, হকিস্টিক, হাতুড়ি, লোহার পাইপ ইত্যাদি দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে এসে গতিরোধ করেন। আওয়ামী লীগের ওই সন্ত্রাসীরা সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েলকে খুন করার উদ্দেশ্যে তাঁর মাথার ডান পাশে সজোরে কোপ মেরে মারাত্মক জখম করেন। এ সময় জুলফিকারের সঙ্গে তিনিও (বাদী) ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমি শুনেছি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আদালতে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। তবে মামলার কপিসহ আদালতের নির্দেশনা আমি এখনো পাইনি। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশারারফ হোসেন ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর মন্ত্রিত্ব পেয়ে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তবে ২০২০ সালের ১৬ মে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি সুবলচন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনায় করা একটি মামলার পর খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্থানীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০২০ সালের ৭ জুন রাতে ফরিদপুরে খন্দকার মোশররফের বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযানে তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত বরকত-রুবেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্থানীয় রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর গত বছরের ৮ মার্চ অর্থ পাচার মামলায় মোশাররফের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর কিছুদিন পর জাতীয় সংসদের কাজেও পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন একসময়ের আলোচিত মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০২২ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান।