বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মিয়া মা, তাঁর স্ত্রী ও চার ছেলেকে নিয়ে বিষখালী নদীর বুকে জেগে ওঠা মাঝের চরে বসবাস করছেন। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর আইলা, মহাসেন, আম্ফানসহ বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছেন।
এসব ঝড়ে অতিরিক্ত জোয়ারে পানি বাড়লেও তাঁদের ঘরবাড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এবার ঘূ্র্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে তাঁদের ঘরটি উপড়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে তাঁরা একটি গরুর খামারে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন তাঁরা নতুন করে আবার মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য ঘরবাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
মাঝের চরের আরেক বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী কাঞ্চান আলীর ঘর ভেঙে গেছে রিমালের আঘাতে। তিনি বলেন, ১৮ বছর আগে সিডরে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়েছেন। এবার রিমালের আঘাতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু (ঘর) হারিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর ও কাঞ্চন আলীর মতো চরের তিন শ পরিবারের একই অবস্থা। ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার সময় জলোচ্ছ্বাসে ভিটেমাটি বুকসমান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অনেকের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে ও ভেঙে গেছে। ঝড়ের পর কোনো কোনো পরিবারের সদস্যরা দুই থেকে তিন দিন অভুক্ত থেকেছেন। চরের ভুক্তভোগী লোকজন ত্রাণ নয়, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মাঝের চরের চারপাশের রিংবাঁধের বিভিন্ন জায়গা ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে যাওয়া ঘরবাড়ি নতুন করে তৈরিতে ব্যস্ত লোকজন। চরের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে তৈরি কংক্রিটের রাস্তাগুলো দেবে মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
মাঝের চরের বাসিন্দা কাঞ্চন আলী খান বলেন, ‘আমাদের এই চরে এক হাজারের মতো বাসিন্দা আছে। এইহানে বাইচ্চা থাহার জন্য একটা মজবুত বাঁধ দরকার।’
চরের আরেক বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর বসত ঘরটি ভেঙে গেছে। পরিবারের সাতজনকে নিয়ে এখন একটি গরুর খামারে থাকছেন। ভেঙে যাওয়া ঘরটি নতুন করে তুলতে হবে। কোথায় টাকা পাবেন, সেই চিন্তায় আছেন। আজ এই চরে একটি বাঁধ থাকলে তাঁদের এত ক্ষতি হতো না।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে জেলায় ৩ হাজার ৩৭৪টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৩৪টি বসতঘর। ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির মাছের ঘের ও জলাশয়।