টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বিল বকেয়ার মামলায় মো. তারেক মিয়া (৩৫) নামের এক সবজি বিক্রেতা ১১ দিন কারাভোগের পর অবশেষে জামিন পেয়েছেন। আজ বুধবার বেলা ১১টায় টাঙ্গাইল আদালতের (বিদ্যুৎ) বিচারক রিজওয়ানা রশীদ তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তারেক মিয়ার পরিবারের দাবি, তাঁরা ভাড়াটে হিসেবে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিউবো ওই বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ভাড়াটে তারেকের বিরুদ্ধে মামলা করে।
১৬ অক্টোবর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার অভিযোগে তারেক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। টাঙ্গাইল আদালতের আইনজীবী এস এম ফাইজুর রহমান তারেকের জামিন হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তবে কারাগার থেকে ছাড়া পেতে জেলগেটে স্বজনদের সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এর আগে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য মিটারমালিককে বাদ দিয়ে সবজি বিক্রেতা তারেকের নামে মামলা করায় ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে পোস্ট দেন। বিষয়টি নিয়ে সখীপুরেও বেশ সমালোচনা হয়।
মামলার বিবরণ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জেলখানা মোড় এলাকায় সাইফুল ইসলাম ওরফে তারা মিয়ার বাড়ি ভাড়া নেন তারেক মিয়া। এরপর থেকেই তারেক নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছিলেন বলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন। প্রায় পাঁচ মাস আগে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ মিটারে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। পরে ওই বাড়ির মালিক এ বিষয়ে অভিযোগ করলে পুরোনো মিটারটি পরিবর্তন করে সেখানে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দেয়।
গত ২ জুন তারেক পুরোনো মিটারের বিপরীতে ২২১ টাকা বিল পরিশোধ করেন। এর কিছুদিন পর ওই বাড়ির মালিক সাইফুলের কাছে ৫৪ হাজার ৫৪৮ টাকার একটি বকেয়া বিল আসে। তবে সাইফুল ওই বিল পরিশোধ করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ২৭ জুলাই বিউবোর সখীপুর কার্যালয়ের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বিদ্যুৎ আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় বকেয়া বিলের দায়ভার ভাড়াটে তারেকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে বাড়ির মালিক সাইফুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তারেকের স্ত্রী মিতু আক্তার বলেন, প্রতি মাসেই তাঁরা ঠিকমতো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। কখনো তাঁরা বকেয়া রাখেননি। এর আগেও ওই বাসায় অন্য ভাড়াটে ছিল। ওই ভাড়াটেরা বিল বকেয়া রেখে যেতে পারে।
সখীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত লতিফ বলেন, কারাগারে থাকা তারেক মিয়া সখীপুর বিউবোর কোনো গ্রাহক নন। তাঁর নামে কোনো মিটার বা আবাসিক হিসাবও নেই। মামলায় যে হিসাব নম্বরটি উল্লেখ করা হয়েছে, তা বাড়ির মালিক সাইফুল ইসলামের। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য মিটারমালিককে বাদ দিয়ে ভাড়াটের নামে মামলা করার বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের ‘হয়রানি’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিউবোর সখীপুর কার্যালয়ের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী হিসেবে তারেকের নামে মামলা করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ আইনে এটা করা যায় বলে তিনি দাবি করেন। তবে বিদ্যুতের মূল গ্রাহককে বাদ দিয়ে ভাড়াটের নামে মামলা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।