নিখোঁজ ষাটোর্ধ্ব আবুল কালাম আজাদকে উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা
নিখোঁজ ষাটোর্ধ্ব আবুল কালাম আজাদকে উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা

সেতু থেকে লাফিয়ে পড়েন নারী, বাঁচাতে গিয়ে নিখোঁজ বৃদ্ধ

অনেকের সামনে সেতুর ওপর থেকে পানিতে ঝাঁপ দেন সুমি খাতুন (৩৫) নামের এক নারী। এ সময় সবাই মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যবসায়ী ওই নারীকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রায় ডুবে যাওয়া নারীকে উদ্ধার করে অন্য একজনের সহায়তায় পাড়ে তুলতে পারলেও নিজে আর উঠতে পারেননি। স্রোতে ভেসে গেছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা শহর–সংলগ্ন গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রধান সেচ খালের সাদা ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ওই ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি।

খুলনা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাঁচ সদস্যের একটি ডুবুরি দল গতকাল রাত ১০টা থেকে সেচ খালে তল্লাশি চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় লোকজন নিজেদের মতো করে চেষ্টা করছেন। ২২ ঘণ্টায়ও খোঁজ মেলেনি ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবুল কালাম আজাদের।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের হাসর আলীর মেয়ে সুমি খাতুন আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় সাদা ব্রিজ থেকে জিকে খালের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জগন্নাথপুর গ্রামের লিয়াকত আলী জানান, গতকাল সন্ধ্যার দিকে একজন নারী পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পানিতে পড়ার পর মাছ ধরার দড়ি (রশি) আঁকড়ে ধরেন এবং তাঁকে বাঁচাতে আকুতি জানান। তাঁকে উদ্ধার করতে আবুল কালাম আজাদ পানিতে ঝাঁপ দেন। পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার পর ওই নারীকে পাড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রবল স্রোতের মুখে না পেরে তিনিও সহযোগিতা চান। এ সময় আরেকজন সেখানে ঝাঁপ দেন এবং ওই নারীকে দড়িসহ কূলে নিয়ে আসেন। তবে আবুল কালাম আজাদ দড়ি ছেড়ে সাঁতার কেটে কূলে পৌঁছানোর সময় স্রোতে ভেসে যান। এ সময় তিনি ‘আমাকে বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। তবে তাঁকে কেউ উদ্ধারে না নামায় এক পর্যায়ে ডুবে যান।

আবুল কালাম আজাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ ছিল জানিয়ে ছোট ছেলে ইসাহক আলী বলেন, ‘আমার আব্বা সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। মানুষের সেবাই দিনরাত কাজ করতেন। যে কারণে বৃহস্পতিবার নিজেই ওই ডুবন্ত নারীকে উদ্ধার করতে পানিতে ঝাঁপ দেন। তাঁকে উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যেতে অনুরোধ করছি।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চুয়াডাঙ্গার উপসহকারী পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে সংবাদ পান তাঁরা। সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলনা কন্ট্রোলের সঙ্গে কথা বলেন। খুলনা থেকে আসা সাইদুর রহমানের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের ডুবুরি দল রাত ১০টা ১০ থেকে টানা তিন ঘণ্টা কাজ করে। এরপর আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ২০ মিনিট থেকে তল্লাশি চলছে। স্থানীয় লোকজন যথাযথ চেষ্টা করছেন। যতক্ষণ উদ্ধার না হয় অভিযান চলবে।