নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে আপত্তি তুলেছেন এক চেয়ারম্যান প্রার্থী। আজ রোববার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বির কাছে লিখিত আবেদন করেন তিনি। এতে দুই প্রিসাইডিং ও এক সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিষয়ে আপত্তির কথা জানান ওই প্রার্থী।
ওই প্রার্থীর নাম শাহজালাল মিয়া। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক দোয়াত কলম। নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে আপত্তির পাশাপাশি নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলামের (নারায়ণগঞ্জ-২) প্রভাব বিস্তার বন্ধ, ছয়টি ইউনিয়নের সব কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দাবিও জানিয়েছেন শাহজালাল মিয়া।
আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের দুবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন শাহজালাল মিয়া। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতি উপজেলা নির্বাচনে দোয়াত কলম প্রতীক পেয়েছেন। তাঁর পাশাপাশি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বপন (ঘোড়া প্রতীক) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামী মঙ্গলবার এই উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
লিখিত অভিযোগে শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘দুপ্তারা, ফতেপুর ইউনিয়নসহ আরও কিছু এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন করে জাল ভোট ও নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছেন। দোয়াত কলম প্রতীকের কোনো পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। যার ফলে এলাকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি আমার কর্মীরা পোলিং এজেন্ট হতে ভয় পাচ্ছেন। তার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেও কোনো কার্যকরী সমাধান পাওয়া যায়নি।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সংসদ সদস্য ও সরকার দলীয় হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু এরই মধ্যে সাইফুল ইসলামকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে তাঁর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, শাহজালাল মিয়ার অনুসারী ও সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের হুমকির অভিযোগ করেন এই প্রার্থী। পরে আরেকটি আবেদনে সংসদ সদস্য বা তাঁর স্ত্রী সভাপতি, এমন ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত না করার দাবি জানান প্রার্থী শাহজালাল।
সংসদ সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনের ভারসাম্য নষ্ট করছেন দাবি জানিয়ে শাহজালালের ওই অভিযোগে বলা হয়, এর আগে হুইপ ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের ব্যাপারে আপত্তি জানানো হলেও তাঁরা নির্বাচনী কার্যক্রমে বহাল রয়েছেন। এর মধ্যে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর চাচাশ্বশুর হাজী বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হায়াতুজ্জামানকে বিশনন্দী ৭ নম্বর ওয়ার্ড ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং প্রার্থীর খালু পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো. বেনজীর আহমেদকে ২০ নম্বর মধ্যারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠনের নেতা নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনও একটি কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন, যা একপক্ষীয় নির্বাচন পরিকল্পনার ইঙ্গিত।
উপজেলাটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা মহিলা লীগ নেত্রী শাহিদা মোশারফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এই দুই পদে এবার আর ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।