দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ছড়া(ঝিরি) থেকে আবার বালু উত্তোলন ও বিক্রির অনুমতি দিয়েছে উপজেলা ভূমি কার্যালয়। এভাবে বালু উত্তোলনের ইজারার কারণে বনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে বন বিভাগ। ইতিমধ্যে বন বিভাগ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, বালু উত্তোলনের কারণে সংরক্ষিত বন এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে চলতি বছর ৬ জানুয়ারি বন বিভাগের আপত্তির পর চুনতির সংরক্ষিত বনের ভেতর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। সেদিন অভিযান পরিচালনা করে বালু উত্তোলন ও স্তূপ করা বালু নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের বালু উত্তোলনের অনুমতি না দেওয়ার কথা ছিল, তবে এখন নতুন করে আবার অনুমতি দেওয়া হলো। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান ৪ ডিসেম্বর বনের ভেতর সাতগড় ছড়া থেকে ১৫ হাজার ঘনফুট বালু স্পটে নিলামের কার্যাদেশ দেন।
মোহাম্মদ আয়াজ উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে এই বালুর বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দপত্রে বলা হয়, ‘চুনতি ৮ নম্বর ওয়ার্ড সাতগড় ছড়া থেকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু ১৫ হাজার ঘনফুট ৬ টাকা হারে মোট ৯০ হাজার টাকায় নিলাম প্রদান করা হলো। নিলামকৃত স্থানে পুনরায় ড্রেজার মেশিন বা পাম্প বা অন্য কোনো উপায়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া নিলামকৃত বালু যে উত্তোলন করুক না কেন, সরকারি নিলাম মূল্য ছাড়া কাউকে বালু উত্তোলন বাবদ কোনো টাকা দেওয়া যাবে না।’
তবে বন বিভাগ বলছে, সেখানে কোনো ভেসে আসা বালু নেই। নতুন করে যে বালুর নিলাম দেওয়া হয়েছে, সেই বালু বনাঞ্চলের ভেতরের সাতগড় খাল বা ছড়া থেকে উত্তোলন করতে হবে। এটা বনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। চুনতি অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন। ৬ জানুয়ারির পর লাম্বাশিয়া এলাকায় বনের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। ওই বেড়ার ভেতর থেকে এখন বালু নিলাম দেওয়া হলো।
দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে লাম্বাশিয়া এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ করেছিলাম আট–নয় মাস আগে। এখন নতুন করে বালু উত্তোলনের অনুমতি বা নিলাম দেওয়ার কারণে অভয়ারণ্য হুমকিতে পড়বে।’
নিলাম কার্যাদেশে ভূমি কার্যালয় কোন স্পট থেকে বালু তোলা হবে, তা উল্লেখ করেনি। তারা শুধু লিখেছে, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাতগড় ছড়া। ৮ ডিসেম্বর বন বিভাগ ভূমি কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে বালু নিলাম স্থানের সীমানা নির্ধারণের জন্য চিঠি দেয়। এরপর ৯ ডিসেম্বর তহশিলদার চুনতি বন বিটের কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী ইমরানকে লম্বাশিয়া এলাকায় বালু বিক্রির একটি স্থান দেখান। স্থানটি বনাঞ্চলের কাঁটাতারের ভেতরে অবস্থিত। যদিও গত ৫ আগস্টের পর কাঁটাতার ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু ওই স্থানে কোনো বালু নেই বলে জানান বিট কর্মকর্তা মহসীন আলী ইমরান।
জানতে চাইলে বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাম্বাশিয়ায় যে জায়গা তাঁরা দেখাচ্ছেন, সেখানে কোনো বালু নেই। স্তূপ করা বালু না থাকলে তাঁরা বালু তুলবেন ছড়া বা খাল থেকে। তুলতে হলে বনের ভেতর যেতে হবে। যাঁরা ইজারা নিয়েছেন, তাঁরা তো বালু তুলবেনই। এভাবে বালু উত্তোলন পরিবেশের জন্য হুমকি। তাঁরা এক জায়গায় অনুমতি নিয়ে আরও বিভিন্ন স্থান থেকে বালু তুলবেন। বনের এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা নিষেধ রয়েছে।’
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন ১ (এক) কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা যাবে না।
জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাছান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাম্বাশিয়ায় বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওই জায়গাটা বনের নয়। ওখানে আগে থেকে বালু ছিল। ওগুলো তুলে নেওয়ার নিলাম দেওয়া হয়েছে। তবে যদি বনের জায়গা হয়, তাহলে বালু উত্তোলন করা যাবে না। সেটা আমি বন বিভাগের লোকজনকেও বলে দিয়েছি।’