গতকাল শুক্রবার বেলা একটার দিকে স্বামীর মুঠোফোনে কল দিয়ে কারখানা থেকে বাড়িতে আসার কথা বলেছিলেন চৈতি পাহান (৩৫)। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, চৈতির মুঠোফোনে কল দিয়ে তা বন্ধ পান স্বামী সুরেন পাহান।
স্বামী ভেবেছিলেন হয়তো আজ আর আসবে না। পরদিন বিকেলে লোকমুখে খবর পান জঙ্গলের ধারে এক নারীর লাশ পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ধানখেত থেকে উদ্ধার হওয়া চৈতির লাশ শনাক্ত করেন সুরেন পাহান।
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ৩ নং খানপুর ইউনিয়নের সন্দলপুর গ্রামে সামাজিক বন বিভাগের ভাঙা অফিস এলাকা থেকে চৈতি পাহানের লাশ উদ্ধার করে বিরামপুর থানা-পুলিশ। চৈতি পাহান বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের দলদলিয়া গ্রামের সুরেন পাহানের স্ত্রী। তিনি ফুলবাড়ী পৌর শহরের রাজারামপুর এলাকায় মেসার্স লাভলী জুট মিলস লিমিটেডের স্পিনিং বিভাগে কাজ করতেন। তাঁর স্বামী সুরেন পাহান একজন কৃষিশ্রমিক।
লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে শনিবার বেলা সাড়ে তিনটায় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, বিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল ইসলাম ও দিনাজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পরিদর্শক প্রদীপ কুমার রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লাশ উদ্ধারের সময় চৈতি পাহানের শরীরে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সুরেন পাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোর বউ ফুলবাড়ী উপজেলাত লাভলী জুটমিলোত চটের বস্তা তৈরির কাজ করোছলো। ওই (চৈতি) ফুলবাড়ীত থাকোছলো। প্রতি শুক্রবার সকাল বেলাত বাড়িত আসছলো। আবার শুক্রবার বিকাল বেলাত ফুলবাড়ীত চলে যায়। গত শুক্রবারের আগের শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে ফুলবাড়ী গেইছে। কাল শুক্রবার দুপুর একটার দিকে বাড়িত মোবাইলে কল দিয়ে বাড়িত আসার কতা কইছিলো। পরে ওর আসতে দেরি হওয়ায় বিকাল পাঁচটার দিকে মোবাইলোত কল দিলে মোবাইল বন্ধ পাও। তখন মনে করিছুনু ওই বুঝি আজকা আর আসপেনা। তাই রাতোত আর ওর মোবাইলে কল দ্যাও নাই। আজ বিকালোত মানুষের মুখোত শোনোছো, মোর বউয়ের নাকি লাশ পাওয়া গেইছে। তাই লাশ নিবার থানাত আইছু।’
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার দুপুরে খানপুর ইউনিয়নের বন বিভাগের জমি থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের নাম–পরিচয় শনাক্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নিহত নারীর পরিবারের লোকজন থানায় এসেছেন। লাশের বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আগামীকাল (রোববার) সকালে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় পুলিশের তদন্ত চলছে।