বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে সিলেটে একটি যাত্রীবাহী বাসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অবরোধ সমর্থকেরা ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের বাসটিতে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে।
এদিকে আজ সকালে সিলেট থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে কিছু যান চলাচল করলেও যাত্রী ছিল খুবই কম। এ ছাড়া নগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশাসহ যানবাহনের সীমিত চলাচল ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে হেলমেট পরে একদল লোক এসে বাসে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারা একটি টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন নিভে যায়। এ সময় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন। তখন হামলাকারীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাজির হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল আটটার দিকে দক্ষিণ সুরমায় একটি বাসে ভাঙচুর চালান অবরোধকারীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে পিকেটাররা চলে যান। তবে মানুষজনের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিশ সড়কে সক্রিয় আছে।
এদিকে সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলি অতিরবাড়ি এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাছ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পিকেটাররা। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনকে আটক করে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রশিদপুরে অবরোধকারীরা সকাল ৬টার দিকে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ ছাড়া উপজেলার লালাবাজার ও তেলিবাজার এলাকায় অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে পুলিশ এলে তাঁরা সরে পড়ে।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দোহা প্রথম আলোকে বলেন, রশিদপুরে কয়েকজন অবরোধকারী টায়ারে আগুন জ্বালিয়েছিল। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুতই তাঁরা স্থান ত্যাগ করে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অংশে পুলিশ তৎপর আছে। অবরোধকারীরা যেন যান চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেটা পুলিশ দেখছে।
এদিকে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে জেলার বিশ্বনাথের উত্তর ধর্মদা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে অবরোধকারীরা সরে যায়।
সকাল পৌনে আটটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত নগরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড কদমতলী বাস টার্মিনালে অবস্থান করে দেখা গেছে, দূরপাল্লার কোনো বাস সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি। এমনকি টার্মিনালের সব কটি বাস কাউন্টারও বন্ধ। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ দেশের কোনো রুটেই দূরপাল্লার কোনো বাস চলছে না। বাস টার্মিনালে গুটিকয়েক যাত্রী ছাড়া অন্যান্য দিনের মতো যাত্রীও চোখে পড়েনি।
বাস টার্মিনাল এলাকায় কথা হয় মোসাব্বির আহমদ (৪৮) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি হবিগঞ্জ শহরে। জরুরি প্রয়োজনে গতকাল সোমবার সিলেটে এসেছিলেন। এখন ফেরার জন্য সকালে বাস টার্মিনালে এসেছেন। অথচ কোনো বাসই হবিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই তিনি আটকা পড়েছেন।
এর আগে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে সুনামগঞ্জ, ছাতক, দিরাইসহ দূরপাল্লার কোনো রুটের বাস চলতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া নগরেও যানবাহন চলাচল ছিল অল্পসংখ্যক। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের।
সকাল আটটা পর্যন্ত বিএনপি এবং জামায়াতের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান ছিল।
সিলেটে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মীরা রাজপথে আছেন।