ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে জানিয়ে কর্মসূত্রে গাজীপুরের শ্রীপুরে থাকা রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মাশালিয়া গ্রামের দীপু বিশ্বাস থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। এর মধ্যেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁর গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি, মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীপু বিশ্বাস বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোকন বিশ্বাসের ছেলে। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন, গতকাল দুপুরে এমনটা জানতে পেরে তিনি নিজের আইডিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি। তখন তিনি বিষয়টি তাঁর এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান। চেয়ারম্যান তাঁকে জিডি করার পরামর্শ দিলে তিনি শ্রীপুর থানায় জিডি করেন।
এদিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে গতকাল সন্ধ্যার দিকে দীপুর গ্রামের বাড়ি মাশালিয়া বাজারে লোকজন জড়ো হন। তাঁরা মিছিল বের করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রাত সোয়া ৯টার দিকে খোকন বিশ্বাস ও তাঁর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
আজ বুধবার দীপুদের বাড়িতে কথা হয় তাঁর বোন দিথী বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটি আমার বাবার বাড়ি। আমার বিয়ে হয়েছে বালিয়াকান্দির জামালপুরে। আমি রাজবাড়ী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাবার বাড়িতে এসেছি। আমার ছেলের নামে ৫ লাখ টাকার একটি ডিপোজিট খোলার জন্য ৪ লাখ টাকা নিয়ে এসেছিলাম। সন্ধ্যার পর থেকেই রাস্তার লোকজন হট্টগোল করছিল। রাত সোয়া ৯টার দিকে আমাদের বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে আসে। আমি ৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর)-এ কল দিয়েছিলাম। কিন্তু হামলাকারীরা প্রায় বাড়িতে চলে আসায় আমার ছোট বাচ্চা ও অসুস্থ মাকে নিয়ে পালিয়ে যাই। সারা রাত পাটখেতের মধ্যে ছিলাম। সকালে বাড়ি এসে দেখি, আমাদের বাড়ির সবকিছু ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার ব্যাগে থাকা প্রায় সাড়ে চার ভরি সোনার গয়না, টাকা নিয়ে গেছে।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দীপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি প্রায় এক থেকে দেড় মাস আমার ফেসবুক ব্যবহার করি না। গতকাল দুপুরের দিকে জানতে পারি, আমার আইডি থেকে ধর্মীয় স্ট্যাটাস দেওয়া হচ্ছে। এরপর আমি আমার আইডিতে ঢোকার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। বিষয়টি আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে জানাই। তিনি আমাকে থানায় জিডি করতে বলেন। আমি গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় জিডি করি। জিডির কপি থানা থেকে বালিয়াকান্দি, মধুখালী থানায় পাঠানো হয়। এর পর থেকে আমি থানাতে আছি।’
দীপু বিশ্বাসের স্ত্রী চুমকি বিশ্বাস বলেন, ‘প্রাণের ভয়ে আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। টেলিভিশন নিয়ে গেছে। ফ্রিজ ফেঙে ফেলেছে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
অমিতাভ রায় নামে গ্রামের একজন বলেন, ‘আমার বাড়ি এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। হামলাকারীরা রাস্তার পাশে থাকা হিন্দুদের বাড়িতে ঢিল ছুড়েছে। আমার বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এহসানুল হাকিম বলেন, ‘আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, দীপুর আইডি হ্যাক করে এই স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব সময় সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করি।’
মাশালিয়া বাজারে অবস্থান করছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার দাস। তিনি বলেন, ওই ছেলে শ্রীপুর পুলিশের হেফাজতে থাকার সময়ও ফেসবুক আইডি থেকে দুবার স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। এতে বোঝা যায়, তাঁর আইডি হ্যাক হয়েছে। আইডি হ্যাক করা ও হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।