ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বায়েক ইউনিয়নে তিন দিন ধরে ১০টি গ্রাম বিদ্যুৎহীন। সালদানদী গ্যাসক্ষেত্র থেকে বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে সংযোগ এনে মুঠোফোন চার্জ করছেন এলাকাবাসী। আজ শনিবার দুপুরে তোলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বায়েক ইউনিয়নে তিন দিন ধরে ১০টি গ্রাম বিদ্যুৎহীন। সালদানদী গ্যাসক্ষেত্র থেকে বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে সংযোগ এনে মুঠোফোন চার্জ করছেন এলাকাবাসী। আজ শনিবার দুপুরে তোলা

বিদ্যুৎ না থাকায় তার টেনে মুঠোফোন চার্জ

দোকানের বারান্দায় পাঁচটি মাল্টিপ্লাগ। চার্জ করার জন্য ২৫টি মুঠোফোন লাগানো হয়েছে। লোকজন চারপাশে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে চার্জ হওয়ার অপেক্ষা করছেন। তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় সালদানদী গ্যাসক্ষেত্র থেকে বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে সংযোগ এনে লোকজন এভাবেই মুঠোফোন চার্জ করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের সালদানদী গ্যাসক্ষেত্রের প্রধান ফটকের পাশের আজ শনিবার দুপুরের চিত্র এটি।

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কসবার বায়েক গোপীনাথপুর ও কায়েমপুর ইউনিয়নের ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এই তিনটি ইউনিয়নের সব সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ১৫ হাজার ৫০০ মানুষ। পানি কমতে শুরু করলেও এখনো অনেক পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির কারণে বায়েক ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তিন দিন ধরে এই ১০টি গ্রামের ২৫-৩০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন।

স্থানীয় লোকজন ও কসবা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বায়েক ইউনিয়নের খাদলা, মাদলা, গৌরাঙ্গলা, বেলতলী, বিদ্যানগর, হরিপুর, পটিয়া, অষ্টজঙ্গল, পেট্রোবাংলা ও শ্যামপুর গ্রামে ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি ঢোকার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এসব গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আনুমানিক সাত হাজার গ্রাহক রয়েছেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এসব গ্রামে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রামের মানুষ রাতে মোমবাতি ব্যবহার করছেন। তিন দিন ধরে তাঁরা বিদ্যুৎ ছাড়া এবং বিশেষ করে রাতে অন্ধকারে থেকেছেন। অন্ধকারে পানি বৃদ্ধি ও সাপের ভয়-আতঙ্কে তাঁদের দিন কেটেছে। গ্রামের বাসিন্দারা কেউই মুঠোফোন চার্জ করতে পারছেন না। এতে দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে এবং সহায়তার বিষয়ে কারও সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগও করতে পারছেন না। বন্যার পানি আসা ও বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

এদিকে আজ দুপুরে সরেজমিনে কৈখলা ও জয়দেবপুরের সড়কের পথ অতিক্রম করে পেট্রোবাংলায় অবস্থিত সালদানদী গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিদ্যুৎ–সংযোগ এনে তাঁদের মুঠোফোন চার্জ করতে দেখা গেছে।

বায়েক ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা আলামিন মিয়া, কামাল মিয়া ও সিয়াম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। দুর্ভোগে দিন কাটছে। মুঠোফোনের চার্জ থাকে না। সালদা গ্যাসক্ষেত্রের ভেতর থেকে বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে সংযোগ এনে মাল্টিপ্লাগের সঙ্গে যুক্ত করে এবং একাধিক মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার ২৫টি মুঠোফোন একসঙ্গে চার্জ করা হয়। তিন দিন ধরে এভাবেই মুঠোফোন তাঁরা চার্জ করছেন বলে জানান।

কসবা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক ডিজিএম মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশের পরপর কসবার বায়েক ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে শনিবার বিকেলে অষ্টজঙ্গল ও পেট্রোবাংলা এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বন্যায় বিদ্যুতের কোনো খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। পানি কমে গেলে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্য গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হবে।