উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহীর পুঠিয়ায় চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সামাদ। হেরে গেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আওয়ামী লীগের নেতা জি এম হিরা বাচ্চু।
ভোট গ্রহণ শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আব্দুস সামাদ আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬৬৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহসান উল হক মাসুদ ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬৭৯ ভোট। বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চু মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৯ হাজার ৮৭২ ভোট। অল্পের জন্য তাঁর জামানত রক্ষা পেয়েছে।
তবে জি এম হিরা বাচ্চু দাবি করেছেন, ভুতুড়ে ভোটের কারণে তিনি হেরে গেছেন। আজ বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বেলপুকুর ও বানেশ্বর এলাকায় বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৫-৬ শতাংশ। তারপর হঠাৎ ওই কেন্দ্রগুলোতে ভোট পড়ে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০। অনেক জায়গায় ওই প্রার্থীর (আব্দুস সামাদ) ভোট পাওয়ার কথা ছিল না। আসলে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে হেরেছি। যেখানে ভোটার উপস্থিতি নেই, সেখানে এত ভোট হলো কী করে? হঠাৎ ভুতুড়ে ভোটার বেড়ে গেছে। তাই ভোটের হার বেড়ে গেছে।’
জি এম হিরা বাচ্চু আরও বলেন, তিনি সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা থাকতে পারেননি। তাঁকে জানিয়ে অনেক এজেন্ট কেন্দ্র ছেড়েছেন; অনেকেই জানাননি। এজেন্টরাও বুঝে গিয়েছিলেন ভোটে তাঁকে হারানো হবে। তাই তাঁরা প্রতিবাদ না করে কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফলাফল প্রত্যাখান করে বাংলাদেশে কিছু যায় আসে না।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে এলাকায় থেকে পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছিলেন জি এম হিরা বাচ্চু। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছিলেন, প্রতিমন্ত্রী নেতা-কর্মী ও ভোটারদের ফোন করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পুঠিয়ার নির্বাচন নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। সরকারি কাজে তিনি রাজশাহীতে এসেছেন। তাঁর বাড়িতে কাউকে নির্বাচনের সময় আসতে দেননি।
এ বিষয়ে আজ জি এম হিরা বাচ্চু বলেন, ‘আমি প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম। এটার কারণেই হয়তো আজকের এ ফলাফল। এই ফল কখনোই হতে পারে না। আমি কারও বিরুদ্ধে উটকো বা মিথ্যা কোনো অভিযোগ করিনি। সত্য অভিযোগ করলেই সত্য সব সময় সত্যরূপে প্রকাশ পায় না।’
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের অভিযোগ অনেকেই করতে পারেন। এই নির্বাচনে অনেক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক ছিলেন। সব বাহিনীর লোকজন ছিলেন। নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট লোকজন ছিলেন। সবার সামনেই ভোট হয়েছে। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই যিনি হেরে যান, তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন রকম মন্তব্য আসতে পারে।