কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় মদদ ও অর্থায়নের অভিযোগে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলায় তিনি ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সাবেক প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হকসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বুধবার রাতে থানায় মামলাটি করেছেন উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওমর কাইয়ুম। এ মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ আগস্ট করিমগঞ্জ বাজারের মোরগমহালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির সহযোগী সংগঠনগুলো ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা এ হামলায় জড়িত ছিলেন। জাপা মহাসচিব কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন, নির্দেশ ও আর্থিক সহযোগিতায় আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, শটগান, বন্দুক, ককটেল, বিস্ফোরক দ্রব্যসহ হামলা চালান। আন্দোলনকারীদের মোটরসাইকেলগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ হামলায় অনেকেই গুরুতর আহত হন। পরে আসামিরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মুজিবুল হক কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার আগে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ দুবার তিনি কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, মুজিবুল হক একজন সুবিধাবাদী। যেখানেই হালুয়া-রুটি, সেখানেই তিনি। এমন কোনো দল নেই তিনি করেননি। সব দল থেকেই সুবিধা নিয়েছেন। এমনকি হাসিনার ভোটারবিহীন নির্বাচনের অন্যতম দোসর ছিলেন এই মুজিবুল হক। আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতার মতো তাঁরও বিচার হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে জাপা সহযোগিতা করেছে। এর অন্যতম কারিগর দলটির বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক। এ জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মুজিবুল হকের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
এর আগে একাধিকবার কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে জাপার মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝাড়ুমিছিল করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা শেখ হাসিনার সহযোগী মুজিবুল হক ও সানাউল হককে করিমগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণাও করেন।