কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালামের বাসভবন ও কার্যালয়ের কোথাও কোনো ডিভাইস ‘লুকিয়ে’ রাখা আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে তল্লাশি চালিয়েছে প্রক্টরিয়াল টিম। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্রথমে উপাচার্যের বাসায় ও পরে কার্যালয়ে এ তল্লাশি চালানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্যের নির্দেশে তাঁর বাসা ও কার্যালয়ে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননূন যায়েদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে সহ–উপাচার্য মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনের ভূঁইয়ার অনুরোধে তাদের কার্যালয়ও তল্লাশি চালানো হয়।
উপাচার্য শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠসদৃশ’ কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কথোপকথনের ক্লিপগুলোতে এক চাকরিপ্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যা ও পরবর্তী নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত করার আশ্বাস দেন উপাচার্যের (ভিসি) ‘কণ্ঠসদৃশ’ ওই ব্যক্তি। একই সঙ্গে প্রার্থীকে বোর্ডের প্রশ্ন সরবরাহ ও কীভাবে লিখতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ ও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে বোর্ডের আয়োজন ও বোর্ড সম্পন্ন করতে টাকার বিনিময়ে বোর্ডে তিনজন সদস্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয় কথোপকথনে।
ওই অডিও ক্লিপের সূত্র ধরে অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ ব্যানারে গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেন। এ সময় বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা উপাচার্যের অপসারণ দাবি করেন এবং তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
আজ সোমবার সকালে বিক্ষোভকারীরা আবারও উপাচার্যের কার্যালয় খোলার আগে আরেকটি তালা ঝুলিয়ে দেন। প্রশাসন ওই তালা ভাঙার প্রস্তুতি নিলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা উপাচার্যের অপসারণ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই কার্যালয়ে তালা ঝুলছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উপাচার্য তাঁর বাসভবনের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সহ-উপাচার্য মাহবুবুর রহমান, প্রক্টর শাহাদাত হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সেখানে ডেকেছেন তিনি।
এ সময় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে প্রক্টর ও তাঁর সহকারীরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তালা খোলার চেষ্টা করলেও খুলতে পারেননি। পরে সাড়ে ১২টার দিকে তালা খুলে উপাচার্যের কার্যালয়ে ডিভাইসের খোঁজে তল্লাশি চালায় প্রক্টর, পুলিশ ও সিকিউরিটি সেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট দপ্তরের প্রধান শামছুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভিসি স্যারের নির্দেশে তল্লাশি করছি। কোনো অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায় কি না, দেখছি। এখন পর্যন্ত কিছু পাওয়া যায়নি।’
আরও একটি অডিও ফাঁস
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘মিসেস সালাম’ নামে একটি আইডি থেকে আজ বেলা আড়াইটার দিকে উপাচার্য শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠসদৃশ’ কথোপকথনের আরও একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। অডিওটিতে নিয়োগে সর্বোচ্চ মেধাবীকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে উপাচার্যের সাতটি অডিও ফাঁসের ঘটনা ঘটল।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
অডিও ফাঁসের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ কার্যালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে যখন এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে এবং বিভিন্ন কমিটি এটা নিয়ে কাজ করছে, ঠিক একই সময়ে উপাচার্যের সহধর্মিণীর নামে ভুয়া আইডি খুলে সেখান থেকে একান্ত ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনা সংযোজন–বিয়োজন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। ইউজিসি প্রয়োজনে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে। কাউকে বিভ্রান্তি না হয়ে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।