রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে জেলা প্রশাসনের দেওয়া নোটিশের মেয়াদ আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। পরদিন শুক্রবার থেকে পর্যটকেরা জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারবেন। এদিকে বান্দরবানেও চারটি উপজেলা পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের এক নোটিশে রাঙামাটি ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। পুনরায় পর্যটকদের জন্য রাঙামাটি জেলা উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে আজ বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকেরা নির্ভয়ে রাঙামাটি ভ্রমণ করতে পারবেন। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা থাকবে।
রাঙামাটি জেলার সাজেকে সারা বছরই আনাগোনা থাকে পর্যটকের। সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির নেতারা জানান, পর্যটক ভ্রমণে বিধিনিষেধের কারণে সাজেকসহ জেলার পর্যটন খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রুইলুই ভ্যালি টানা ৩৯ দিন পর্যটক শূন্য ছিল। এতে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করে দেওয়া নোটিশের মেয়াদ থাকছে না। আমরা পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এদিকে আজ দুপুরে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটন–সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বান্দরবান জেলা সদরসহ চার উপজেলা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে বাকি তিন উপজেলা রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে কিছুটা সময় লাগবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছারসহ সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও টুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও পর্যটন–সংশ্লিষ্টদের পক্ষে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ, হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন, হোটেল-রিসোর্টের মালিক জাকির হোসেন, শৈক্যচিং মারমা, মফিজুল ইসলাম, বান্দরবান প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় কাজল কান্তি দাশ বলেন, পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটার পর থেকে জেলার ৭০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিগত চার বছর ধরে জেলার অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির প্রধান এই খাত রুগ্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এতে পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারীরা হতাশাগ্রস্ত।
জাকির হোসেন বলেন, পর্যটন ব্যবসায় মন্দার কারণে তিনিসহ অনেক ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। পর্যটন খাতকে সচল করতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শৈক্যচিং মারমা বলেন, থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি ছাড়া বাকি এলাকা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। অথচ ওই তিন উপজেলাতেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
মতবিনিময় সভার আগে জেলায় পর্যটনশিল্পে নিয়োজিত হোটেল-মোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিবহন শ্রমিক, ট্যুর গাইডরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের হাতে পর্যটন স্পট খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যানার দেখা গেছে।