লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জড়ো হওয়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ শনিবার বিকেলে উপজেলার গোতামারী ডিএনএসসি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ সংবাদ সম্মেলন করে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি। এতে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
এর আগে দুপুরে হাতীবান্ধা থানার মিলনায়তনে বিজিবির তিস্তা ব্যাটালিয়ন (৬১) ও পুলিশের যৌথ আয়োজনে একটি সংবাদ ব্রিফিং করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার গোতামারী সীমান্তে জড়ো হন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লোকজন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ভারত ও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই ঘটনায় আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ। তিনি বলেন, গতকাল বেলা ১১টার দিকে উত্তর গোতামারী শ্মশানঘাট গ্রাম সীমান্তে হঠাৎ মধ্যবয়সী ৫০ থেকে ৬০ ব্যক্তি জড়ো হন। খবর পেয়ে দইখাওয়া বিজিবির কমান্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁদের বুঝিয়ে সীমান্ত থেকে ফেরত নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। পরে অল্প সময়ের মধ্যে হাতীবান্ধা ও পাশের অন্যান্য উপজেলা থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যক্তি জড়ো হন। তাঁদের মধ্যে ২০০ থেকে ২৫০ ব্যক্তি শূন্যরেখার খরপো নদীতে অবস্থান নেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ বলেন, পরে বিজিবি জনবল বাড়িয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে জড়ো হওয়া লোকজন যেন শূন্যরেখা অতিক্রম না করেন, বিষয়টি বোঝানো হয়। পরে বিষয়টি তিনি ভারতের ৭৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডকে জানান। বিএসএফের ওই ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজনের কথা শুনে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাঁদের বাড়িতে ফেরত যেতে অনুরোধ করেন। এই অনুরোধের পর তাঁরা পর্যায়ক্রমে বাড়ি ফিরে যান।
সংবাদ সম্মেলনে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোনাব্বিরুল ইসলাম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি অশ্বিনী কুমার বসুনিয়া, সহসভাপতি কালী শংকর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরপরই সারা দেশের মতো হাতীবান্ধায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ দলীয় নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন কয়েক হাজার ব্যক্তি।