মহাসমাবেশের এক দিন আগে থেকেই যশোরে নেতা–কর্মীদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
অবরোধকে কেন্দ্র করে ৪০০ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন জায়গায় হামলা হওয়ায় এলাকায় থাকা নিরাপদ মনে করছেন না দলের নেতা–কর্মীরা।
যশোরে বিএনপির নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের পরিবার পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে অন্তত পাঁচ হাজার নেতা–কর্মী বর্তমানে ঘরছাড়া। এতে এসব নেতা–কর্মীর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার পাশাপাশি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী রাজপথে থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে নেতা–কর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দিনে যশোরে নতুন করে আরও সাতটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় জ্ঞাত ও অজ্ঞাত মিলে বিএনপির এক হাজার নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যশোর জেলার বিভিন্ন থানায় ২০টি মামলা দিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় দুই হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ জনের বেশি নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় দুই হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকায় মহাসমাবেশের এক দিন আগে থেকেই যশোরে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে অধিকাংশ নেতা–কর্মী ঘরছাড়া। অধিকাংশ নেতা–কর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলার আসামিরা তো বটেই, মামলা নেই—এমন নেতা–কর্মীও বাড়িতে থাকতে সাহস পাচ্ছেন না।
সর্বশেষ গত রোববার যশোর-নড়াইল সড়কের হামিদপুর এলাকা থেকে যাত্রীবাহী দুটি বাস থেকে বিএনপির ৬৬ নেতা–কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় বাসের ভেতর থেকে ককটেল, পেট্রল ও লাঠিসোঁটা জব্দ দেখিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম, জেলার শীর্ষ নেতৃত্বসহ ৮৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে চলমান কর্মসূচি ঘিরে জেলায় ধরপাকড়ও চলছে। গত চার দিনে সাড়ে তিন শতাধিক নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের সবাই কারাগারে।
যশোরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত করা বেশির ভাগ রাজনৈতিক মামলাতেই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এটিই বেশি উদ্বেগের। কারণ, অজ্ঞাতনামাদের আসামি করলে নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে কাউকে আটক করে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো যায়। পুরোনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নেতা–কর্মীদের।
চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে শহরতলিতে দু–একটি ঝটিকা মিছিল হলেও উপজেলাগুলোয় তেমন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না বললেই চলে। শহরের লালদীঘিপাড়ের দলীয় কার্যালয় এক সপ্তাহ ধরে নেতা–কর্মীশূন্য। বন্ধ রয়েছে দলীয় কার্যালয়।
গত মঙ্গলবার রাতে চৌগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলামসহ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। একই রাতে জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রাশিদা রহমান ও যুবদল নেতা শরিফুল ইসলামের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন জায়গায় হামলা হওয়ায় এলাকায় থাকা নিরাপদ মনে করছেন না দলের নেতা–কর্মীরা। ফলে বিএনপি সমর্থিত পরিবারগুলো এখন পুরুষশূন্য অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, ‘কোনো কিছুই জানি না। অথচ যাত্রীবাহী পরিবহন থেকে ককটেলসহ নেতা–কর্মী আটকের পর নতুন করে একটি মামলা দিয়েছে পুলিশ। এখন গ্রেপ্তারের ভয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে প্রায় পাঁচ হাজার নেতা–কর্মী এখন ঘরছাড়া। তারপরও কর্মীরা মাঠে আছেন। নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি, হঠকারী কিছু না করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, গাড়ি ভাঙচুর করার সময় বিএনপির নেতা–কর্মীদের আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট অপরাধের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
বিএনপির চলমান অবরোধ কর্মসূচি সফল হয়নি উল্লেখ করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের কয়েকজন নেতা–কর্মী মিলে ভোরবেলায় ফাঁকা মাঠে ঝটিকা মিছিল করছেন। তাদের আন্দোলন প্রাতর্ভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাদের আন্দোলনকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
খুলনা বিভাগের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ এই কর্মসূচি পালন করছে, যা ইতিমধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। গুম, খুন, মামলা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গত ১৫ বছরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। চলমান আন্দোলন–সংগ্রাম সফল হবে বলে আমরা শতভাগ বিশ্বাসী।’