পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে প্রাণহানি না হলেও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। রিমালের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি, বাঁধ, পুকুর, মাছের ঘের, ফসলি জমি—সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল কর্মকর্তা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে চার শ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় পাঁচ শ হেক্টর জমির ফসল। বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে গেছে ২ হাজার ৫০০টি পুকুর ও ঘেরের মাছ। বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ঝোড়ো বাতাসে অর্ধশতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে এবং ৬৫টি খুঁটি হেলে পড়েছে। ৩০০টি মিটার, ৩০টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। গাছ ও গাছের ডাল পড়ে দুই শতাধিক স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো উপজেলা। ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কাঁচা-পাকা সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার।
উপজেলার গোলখালী গ্রামের বাসিন্দা লাবণী বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি ধুয়ে নিয়ে গেছে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় থেমে গেছে কিন্তু বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকছে।
মাধবখালীর কিসমত ঝাটিবুনিয়া গ্রামের কৃষক মো. গণি হাওলাদার বলেন, জোয়ারের পানিতে তাঁর ২০ একর জমির আউশ ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে।
উপজেলায় অন্তত ৮৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের মির্জাগঞ্জ সাবজোনাল কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা চালু হতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে যাতে দ্রুত চালু করা যায়, সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, মির্জাগঞ্জে ৫২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চার-পাঁচটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। পানির চাপ কমলে দু-এক দিনের মধ্যে এসব বেড়িবাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রকৃত তালিকা তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ সাপেক্ষে তাঁদের সহায়তা করা হবে।