পাহাড়ি জমিতে জুমের ধান ঘরে ওঠে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সে সময় পাহাড়িরা পালন করেন নতুন ধানের প্রথম ভাত খাওয়ার নবান্ন উৎসব। চাকমারা একে বলেন নুয়াভাত। উৎসবে ধানের দেবী লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে মুরগি ও শূকর বলি দিয়ে পূজা করা হয়।
আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই আমন্ত্রিত হয়ে খাদ্য, পানীয় ও আনন্দের উৎসবে মেতে ওঠেন। বর্তমানে জুম কৃষির এই উৎসব অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে নতুন প্রজন্মের পাহাড়িদের মধ্যে থেকে।
গতকাল শনিবার বান্দরবানের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের (কেএসআই) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে চাকমা সমাজের নুয়াভাত বা নবান্ন উৎসবের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আলোচকেরা। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কেএসআই পরিচালক মং নু চিং মারমা। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য সিংয়ং ম্রো, সত্যহা পানজি ত্রিপুরা, বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষক বিপম চাকমা প্রমুখ। ‘চাকমা সমাজে নবান্ন উৎসব’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সন্তোষ চাকমা।
সেমিনারে আলোচকেরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি জনগোষ্ঠীই জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। পাহাড়ের জুম কৃষির অনিবার্য অনুষঙ্গ এই নুয়াভাত উৎসব। নুয়াভাত আত্মীয়পরিজন, প্রতিবেশীদের আত্মিক বন্ধনের উৎসব। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই নিজের সংস্কৃতি ও পারিপার্শ্বিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নয়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পূর্বসূরিদের সঙ্গে উত্তরসূরিদের সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার এক ধরনের সংকট ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে। ফলে বর্তমান প্রজন্ম পরম্পরাগত সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন করা না গেলে একসময় নুয়াভাত বা নবান্ন উৎসবের মতো ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।