শীতের কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঠেছে কেবল। সূর্যের আভা আকাশে দেখা দিতেই শুরু হয় তোপধ্বনি। একে একে ৩১ বার তোপধ্বনিতে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের বার্তা। এরপর শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়ে আসেন হাজারো মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলি এলাকায় তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে গড়া এই স্মৃতিস্তম্ভে আজ সোমবার বিজয় দিবসের দিন প্রথমবারের মতো সাধারণ জনতা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
সূর্য ওঠার আগে চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলি এলাকায় সাগরপাড়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ।
তোপধ্বনির পর শুরুতেই স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদত হোসেন ও বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন। এ সময় সিটি মেয়র শাহাদত হোসেন বলেন, ‘বিজয়ের ৫৩ বছরেও বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত হয়নি। ৫৩টি বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা এখনো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হলে আমরা আমাদের বিজয়ের প্রকৃত সুফল অর্জন করতে পারব।’
এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক আহসান হাবীব পলাশ ও চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা।
শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো শেষে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘একাত্তরের চেতনাকে ধারণ করে জুলাই ’২৪–এর বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছে জেলা প্রশাসন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করব আমরা। চট্টগ্রামে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. নোমান হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহাবুবুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদসহ জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
আজ ভোর থেকেই পতাকা ও ফুল হাতে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উত্তর কাট্টলির স্মৃতিস্তম্ভে ছুটে আসেন নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। ফুল হাতে ছুটে আসে শিশুরাও। বাবার কাঁধে চড়ে কিংবা মায়ের হাত ধরে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেন তাঁরা। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। বিজয় দিবসকে ঘিরে চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোর সভা আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। দুপুর ১২টা থেকে চট্টগ্রামের প্রেক্ষাগৃহগুলোয় বিনা টিকিটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং দেশের সর্বত্র উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্মরণে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দোয়া-মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
এ ছাড়া এদিন দুপুরে নগরের হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, ভবঘুরে কেন্দ্র ও বৃদ্ধাশ্রমে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিকেলে জেলা ও উপজেলা সদরের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, নৌকাবাইচ, ফুটবল, কাবাডি ও হাডুডু খেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। দিনব্যাপী শিশুপার্ক, ডিসি পার্ক, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর শিশুদের জন্য উন্মুক্ত রাখা ও বিনা টিকিটে প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।