রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথের পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে স্রোত। নদী পাড়ি দিতে এই রুটে ফেরিগুলোর আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। এতে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে ইঞ্জিনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। বাড়ছে জ্বালানি খরচও।
ফেরিমাস্টার ও ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে পানি বাড়তে থাকায় পদ্মা নদীতে স্রোত তীব্রতর হয়েছে। আগে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি বড় ফেরির সময় লাগত ২০–২৫ মিনিট। ছোট ফেরির লাগত ২৫–৩০ মিনিট। পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা বড় ও ছোট ফেরির ক্ষেত্রে দৌলতদিয়ায় পৌঁছাতে লাগত ২৫–৩০ মিনিট। বর্তমানে নদী ভরাট হয়ে পড়ায় আগের চেয়ে সময় অনেক বেশি লাগছে। দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া বড় ফেরি পাটুরিয়ায় পৌঁছাতে সময় লাগছে ৪৫–৫০ মিনিট। অপর দিকে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা এই ফেরি দৌলতদিয়ায় পৌঁছাতে সময় লাগছে ৫৫–৬০ মিনিট। ছোট ফেরির ক্ষেত্রে ৫–১০ মিনিট বেশি সময় লাগছে। আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে, পাশাপাশি জ্বালানি খরচও বেড়ে গেছে।
দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে বর্তমানে ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ৬ নম্বর ঘাটে ফেরি ভিড়ছে না। ৩, ৪ ও ৭ নম্বর তিনটি ঘাট দিয়ে ফেরিতে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। ৩ নম্বর ঘাট থেকে ৭ নম্বর ঘাটের দূরত্ব এক কিলোমিটারের বেশি। ৭ নম্বর ফেরিঘাট সবার শেষে ভাটিতে বাহির চর ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় অবস্থিত। এক কিলোমিটার উজানে ৩ নম্বর ঘাট অবস্থিত। পাটুরিয়া থেকে আসা কোনো ফেরি দৌলতদিয়ায় এসে উজানে থাকা ৩ নম্বর ঘাটে ভিড়তে চায় না। এক কিলোমিটার নদীপথ উজাতে স্রোতের কারণে অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় বেশি লাগে। সাধারণত ৭ নম্বর ঘাট ফাঁকা থাকলে সেখানেই ভেড়ে।
কুষ্টিয়া থেকে আসা পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানের চালক সহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগেও ফেরিতে ওঠামাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছাতেন। দুই সপ্তাহের বেশি ধরে ফেরিতে উঠলেই এক ঘণ্টার আগে নদী পাড়ি দিতে পারছেন না। যে কারণে ঘাটে এসে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
রো রো (বড়) ফেরি ভাষাশহীদ বরকতের ইনচার্জ মাস্টার সাইফুল ইসলাম বলেন, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্রোত অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে স্রোতের তীব্রতা অনেক বেশি। দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া যেকোনো ফেরি দুই কিলোমিটার উজানে গিয়ে পাটুরিয়ায় যেতে হচ্ছে। পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা ফেরিও দুই থেকে তিন কিলোমিটার ভাটিতে নয়কান্দির কাছাকাছি গিয়ে দৌলতদিয়ার পৌঁছাচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, স্বাভাবিক সময়ে পাঁচ থেকে ছয় নটিক্যাল মাইল গতিতে ফেরি চলত। স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় দুই থেকে তিন নটিক্যাল মাইলের বেশি চলতে পারছে না। স্রোতের বিপরীতে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে ইঞ্জিনের গতি অনেক বাড়াতে হচ্ছে। এতে ইঞ্জিনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়তি জ্বালানিও খরচ হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। এতে সময়মতো যানবাহন পারাপার কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় গাড়ির চাপ কম থাকায় বাড়তি বেগ পোহাতে হচ্ছে না।