নাফনদীর পূর্ব পাশে মিয়ানমার সীমান্ত
নাফনদীর পূর্ব পাশে মিয়ানমার সীমান্ত

টেকনাফে পালিয়ে এল বিজিপির আরও ১৩ সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের মধ্যে আজ বুধবার নাফ নদী অতিক্রম করে কক্সবাজারের টেকনাফে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৩ সদস্য। একটি নৌকা নিয়ে বিজিপির সদস্যরা রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ থেকে সকাল সাতটার দিকে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নাজিরপাড়াসংলগ্ন নাফ নদীর বাংলাদেশ জলসীমায় পৌঁছান। পরে তাঁরা বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

বিজিপির ১৩ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আসার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন করে আসা বিজিপির ১৩ সদস্যকে নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে দেশটির রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত ও লড়াইয়ে জড়িয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের বিপুল এলাকাসহ বিজিপির ২০টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে মংডু টাউন ও আশপাশের চারটি গ্রাম মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, নুরুল্লা ও হাস্যুরাতা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। এমন পরিস্থিতিতে টিকতে না পেরে বিজিপির সদস্যরা নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

গত জুলাই থেকে এই পর্যন্ত মোট ১২৩ জন বিজিপির সদস্য টেকনাফে বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। টেকনাফের দমদমিয়া বিজিবি ক্যাম্পের পাশের একটি বহুতল ভবনে বিজিপি সদস্যদের রাখা হয়েছে। ভবনটির পূর্ব পাশে নাফ নদী, নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য।

পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কয়েক দফায় দেশটির ৭৫২ জন বিজিপি ও সেনাসদস্য পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিন দফায় কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে সবাইকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আজ বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে থেমে থেমে মর্টার শেল-গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটেছে। নাফ নদীর এপারে টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং ও হ্নীলা ইউনিয়নের মানুষ বিকট শব্দের এসব বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। মর্টার শেল বিস্ফোরণ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন টেকনাফ সীমান্তের মানুষ।

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, বিমান হামলার পাশাপাশি কয়েক দিন ধরে মংডুতে ড্রোন হামলাও হচ্ছে। মর্টার শেল ও ভারী গোলার বিস্ফোরণে এপারে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, কায়ুকখালীয়পাড়া, পল্লানপাড়া, কুলালপাড়াসহ আশপাশের ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ২৩টি গ্রামে ভূকম্পন দেখা দিচ্ছে। মংডু থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। নাফ নদীর বাংলাদেশ জলসীমানা থেকে বহু রোহিঙ্গাকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

গত সোম ও মঙ্গলবার নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গা নাগরিকদের বহন করা একাধিক নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জলসীমানা থেকে অন্তত ৪৪ জন রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন নারী, ১৮ জন শিশু ও ৭ জন পুরুষ।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।