মা ইলিশ সংরক্ষণে দেশের নদী ও সাগরে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার জেলেরা নদী ও সাগরে ইলিশ ধরতে নামবেন। এরই মধ্যে জাল, ট্রলার, নৌকাসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম মেরামত করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তাঁরা। এখন শুধু অপেক্ষা নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হওয়ার।
প্রজনন মৌসুমে ইলিশের বংশবিস্তার নির্বিঘ্ন করতে গত ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগেই ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে আট মাসের জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা। তা চলবে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।
গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার চর খোন্দকার ও পূর্ব চর চান্দিয়ার জেলেপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা বাড়ির আঙিনায় ও রাস্তার পাশের খোলা স্থানে জাল মেরামত করছেন, কেউ জাল গোছগাছ করছেন। আবার কেউ নৌকা ধুয়ে–মুছে পরিষ্কার করে নদীতে নামাচ্ছেন।
হরলাল জলদাস নামের এক জেলে বলেন, ‘২২ দিন খুব কষ্টে কেটেছে। আমরা তো মাছ ধরা ছাড়া কোনো কাজ পারি না। নদীতে মাছ ধরে সংসার চলে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে যাতে নদীতে নামতে পারি, সে জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে রাখছি।’
চর খোন্দকার এলাকার ট্রলারমালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার সাগরে ও নদীতে জেলেদের জালে কম ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। এরপরও নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেই সাগরে ট্রলার পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। জেলেরা ইতিমধ্যে ঘাটে এসে ট্রলারে অপেক্ষা করছেন।
আবদুল খালেক নামের আরেকজন বলেন, ‘ইলিশের মৌসুম মূলত অক্টোবরেই শেষ। তারপরও নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর প্রতিবছরই সপ্তাহখানেক প্রচুর ইলিশ জালে ধরা পড়ে। আশা করছেন, এবারও সেরকমই হবে।’
প্রজনন মৌসুম শেষ হওয়ার পরপরই ১ নভেম্বর থেকে দেশের সব নদ-নদীতে আট মাস জাটকা (২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের ইলিশ) ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আট মাস জাটকা ধরা, বিক্রয়, মজুত ও পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। তবে বড় আকারের ইলিশ ও অন্যান্য মাছ ধরতে কোনো বাধা নেই।
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীতে বেশ কয়েক দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে প্রায় দেড় লাখ মিটার জাল ও বেশ কিছু অন্যান্য মাছ জব্দ করা হয়েছে বলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের নিষেধাজ্ঞা আগের তুলনায় অনেক বেশি সফল হয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলেদের সহযোগিতার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। সাধারণ জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন। আশা করি, ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।’