এলাকার লোকজন ধারণা করছেন, স্থানীয় দরিদ্র মানুষ গণহারে ফরম কিনে এবং জমা দিয়ে প্রতারিত হতে চলেছেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর গ্রামের রোকসানা খাতুন (৪০) নামের এক গৃহবধূ পাঁচ টাকায় সদস্য ফরম পূরণ করে ‘অহিংস গণ–অভ্যুত্থান’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের সদস্য হন। এই টাকা জমা দেওয়ার উদ্দেশ্য এক লাখ টাকা ঋণ পাওয়া।
রোকসানার সদস্য হওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তাঁকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। এখন বলা হচ্ছে, ২০ লাখ টাকা সমমূল্যের ফরম বিক্রি হলে কেবল তখন থেকে ঋণ পাওয়া যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ টাকার বিনিময়ে লাখ টাকার ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে একটি চক্র এরই মধ্যে প্রায় এক লাখ সদস্যের কাছ থেকে পাঁচ টাকা করে আদায় করেছে। এখন প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজার ফরম জমা পড়ছে। এক ব্যক্তি একাধিক নামে এবং এক পরিবারের সবার নামে একাধিক ফরম কিনছেন এবং জমা দিচ্ছেন।
ভৈরবে এ ধরনের কোনো সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য তাঁর জানা নেই। তবে নিয়মনীতির বাইরে অর্থ আদায়ের সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে প্রতিকারে উদ্যোগী হবেন।মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান, ইউএনও, ভৈরব
এলাকার লোকজন ধারণা করছেন, স্থানীয় দরিদ্র মানুষ গণহারে ফরম কিনে এবং জমা দিয়ে প্রতারিত হতে চলেছেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সংগঠনের মূল কার্যালয় নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়। সংগঠনটির কর্ণধার আবুল বাসার নামের এক ব্যক্তি। ভৈরবে এই সংগঠনের শাখা খোলা হয় দেড় মাস আগে। ঋষিপট্টি এলাকার রতন বর্মণ নামের এক ব্যক্তি শাখা সংগঠনের কর্ণধার। রতনের বাসার একটি কক্ষকে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংগঠনের আত্মপ্রকাশের সময় জানানো হয়, সংগঠনের সদস্য হওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো এলাকা নেই। নির্দিষ্ট বয়সও নেই।
চাইলেই যেকোনো বয়স, পেশা এবং ধর্মের মানুষ কেবল পাঁচ টাকা দিয়ে কিনে ফরম পূরণ করে জমা দিলেই সদস্য হয়ে যাবেন। বিনিময়ে পাবেন সুদবিহীন এক লাখ টাকা করে ঋণ। প্রতি মাসে কেবল কিস্তির এক হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে। সংগঠনের কিছু কর্মীর মাধ্যমে চারপাশে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এই তথ্য। তথ্য প্রচারের পর প্রতিদিন রতনের বাসায় লোকজন এসে সদস্য হতে থাকেন।
দুই সপ্তাহ আগে থেকে সংগঠনের পক্ষে একদল নারী কর্মী মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাঁচ টাকায় সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। এর পর থেকে সদস্য সংগ্রহে গতি আসে এবং চারপাশে ব্যাপক প্রচার পায়। এরই মধ্যে এক লাখ সদস্য সংগ্রহ হয়ে গেছে বলে প্রচার রয়েছে। কিন্তু সদস্যদের মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত ঋণসুবিধা পাননি।
শিউলী দাস ভৈরব বাজার এলাকার বাসিন্দা। ঋণ পেতে সদস্যের খাতায় তাঁরও নাম রয়েছে। তিনি বলেন, ‘পাঁচ টাকা দিয়ে ঋণ পাওয়া যায়। আবার সুদও নেই। মাসে কেবল এক হাজার টাকা করে কিস্তি পরিশোধ করলেই হবে—এত সহজ শর্তে ভৈরবের আর কোথাও থেকে লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণেই আমি সদস্য হয়েছি।’
ঋণ পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘২০ লাখ টাকা জমা হলে ঋণ দেওয়া শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।’
সংগঠনের মাঠকর্মী বিপাশা বেগম। চার দিনে তিনি আট হাজার সদস্য সংগ্রহ করেছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন ২ হাজার ২০০ টাকা। তিনি বলেন, ‘ডেকে আনতে হয় না। এমনিতেই শত শত মানুষ সদস্য হতে লাইন দিচ্ছে। আমার কাজ সদস্য করা। কখন ঋণ দেবে, সেটা আমার জানার বিষয় না।’
পুরো বিষয়ে কথা হয় রতনের সঙ্গে। পাঁচ টাকায় সদস্য হয়ে এক লাখ টাকা ঋণের আশ্বাসের কথা স্বীকার করেন তিনি। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁর ভাষ্য, সদস্যরা কেবল পাঁচ টাকায় এক লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার কথা শুনেছেন, কিন্তু ঋণ পেতে হলে যে ২০ লাখ টাকা জমা হতে হবে—এই তথ্য অজানা। এ কারণে মাঠে এত বিভ্রান্তি। আর এই টাকা তাঁর হাতে থাকবে না। তিনি জমা দেবেন মাধবদীর আবুল বাসারের কাছে।
কথা হয় আবুল বাসারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার সংগঠনের মূল দায়িত্ব সামাজিক কাজ করা। এখানে টাকাপয়সা গ্রহণ এবং ঋণ দেওয়া—এসব কিছু নেই।’
ইউএনও মোহাম্মদ সাদিকুর রহমানকে জানানো হলে তিনি জানালেন, ভৈরবে এ ধরনের কোনো সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য তাঁর জানা নেই। তবে নিয়মনীতির বাইরে অর্থ আদায়ের সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে প্রতিকারে উদ্যোগী হবেন।