বড়াল নদের প্রবাহ ফেরাতে বড়াল নদ খনন করার পরে নদের তলদেশেই মাটি ফেলে রাখা হয়েছিল। এখন পানি ঢোকার পরে সেই মাটি সরানোর তোড়জোড় শুরু করা হয়েছে। গত সোমবার থেকে পদ্মা নদীর পানি বড়ালে ঢুকেছে। ওই দিন থেকে মাটি সরানোর শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই নদের উৎসমুখের কাছে রেগুলেটরের (চারঘাট স্লুইসগেট) পূর্ব পাশের খনন করা জায়গা নতুন পানিতে ভেসে গেছে। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলী বলছেন, ঠিকাদারকে আগেই মাটি সরাতে বলা হয়েছিল। তাঁরা তখন সরাননি।
সম্প্রতি অর্ধকোটি টাকার বেশি ব্যয় করে বড়াল নদের উৎসমুখ খনন করা হয়েছে। কিন্তু খননের মাটি তুলে নদের তলদেশেই রাখা হয়। পরে গত ৩০ জুন এক দিনের বৃষ্টিতেই সেই মাটি আবার নদে মিশে যাচ্ছিল। এ নিয়ে সোমবার (৮ জুলাই) ‘এবারও বড়াল খননের টাকা জলে যাচ্ছে’ শিরোনামে প্রথম আলোর রাজশাহী সংস্করণের প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ওই দিন থেকে সেই মাটি সরাতে শ্রমিক লাগানো হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই বড়ালে পানি ঢুকে মাটি ফেলা জায়গাটি ভেসে গেছে।
আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকেরা মাটি তোলার দিনের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আলাইপুর গ্রামে। পরের দিনও মাটি তুলতে আসবেন কি না জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। যদি আরও বেশি পানি ঢুকে যায়, তাহলে আর কাজ করার সুযোগ থাকবে না।
বড়ালে পানি ঢোকার পরে মাটি তোলার তোড়জোড় কেন করা হচ্ছে জানতে চাইলে রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, আগেই ঠিকাদারকে মাটি সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা নির্দেশ অমান্য করে মাটি ওইভাবেই রেখে দিয়েছিলেন। পরে জামানত বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিলে তাঁরা মাটি সরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ঠিকাদারের কাজের শর্ত রয়েছে যে এক বছরের মধ্যে এই কাজের কোনো ক্ষতি হলে তাঁরাই বিনা পয়সায় ঠিক করে দেবেন।
অথচ এর আগে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁরা এটা রক্ষণাবেক্ষণের খাত থেকে বড়াল খননের জন্য খরচ করেছেন। যাতে উৎসমুখ দিয়ে পানিটা রেগুলেটর পার হয়ে বড়ালে ঢুকতে পারে। এই কাজের সঙ্গে মাটি সরানোর কোনো বরাদ্দ নেই। এ জন্য মাটি সেখানেই রাখতে হয়েছে। বৃষ্টির পানিতেই খনন করা মাটি আবার নদের তলদেশে নেমে যাচ্ছে শুনে বলেছিলেন, খোঁজ নিয়ে দেখবেন কী করা যায়। এরপরেই মাটি সরানোর শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।
চারঘাট স্লুইসগেট এলাকায় ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বড়াল নদের পলি অপসারণের কাজটি করে ‘আমিন অ্যান্ড কোং’ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তাদের পক্ষে কাজ দেখাশোনা করছেন মাহমুদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। পাউবোর নির্দেশ অমান্য করে মাটি না সরানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে আজ বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্রে মাটি নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখার কোনো শর্ত ছিল না। শুধু খনন করার কথা বলা ছিল। তারপরও তাঁরা নিজ উদ্যোগে উৎসমুখের অনেক গভীর থেকে মাটি তুলে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে ফেলেছেন। তবে কাজটি অসম্পূর্ণ ছিল। কারণ, রেগুলেটরের পূর্ব পাশে পানি থাকায় খননযন্ত্র ভেড়ানো যাচ্ছিল না। সেখানে শ্রমিক ছাড়া মাটি সরানো সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু ঈদের আগে ঠিকমতো শ্রমিক পাওয়া যায়নি। এখন তাঁরা সেই মাটি শ্রমিক দিয়ে সরিয়ে ফেলছেন।
বড়াল নদের উৎসমুখ রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পয়েন্টে। ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদ চলনবিলে গিয়ে পড়েছে। এই নদের প্রবাহ ফেরানোর নামে অতীতে একইভাবে তিনবার খনন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। খনন করে তলদেশে তুলে রাখা মাটি আবার নদে মিশে ভরাট হয়ে গেছে।
পানির ভেতরে শ্রমিক দিয়ে মাটি তোলার কাজ দেখে ভায়ালক্ষ্মীপুরের এক কলেজশিক্ষক বলেন, যে সরকারই আসুক, ওই একই কাজ করে। বড়ালে পানি ঢোকার আগে অনেক সময় ছিল, তখন মাটি সরালেই তো কাজের মতো কাজ হতো। এখন পানি থেকে কোদাল দিয়ে কতটুকু মাটি তুলবে?