বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে তৃতীয় দিনের মতো পদবঞ্চিত নেতা ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত আছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে শহরের সাতমাথায় টেম্পল সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।
এদিকে তিন দিনেও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাদের লাগানো তালা খোলা হয়নি। আজ দুপুরেও তালাবদ্ধ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও বগুড়া সদর উপজেলা ও শহর ছাত্রলীগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগ ও সরকারি শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। তাঁরা থেমে থেমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন।
তৃতীয় দিনের মতো চলা বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে শহরের সাতমাথা এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পদবঞ্চিত নেতাদের হটিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের তালা খোলা হতে পারে শহরে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় জেলা ও গোয়েন্দা পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।
গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে, সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকেরা সাতমাথায় আসতে পারেন। এ জন্য আমরাও সতর্ক অবস্থানে আছি।
এর আগে গত সোমবার রাত ৯টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলন ছাড়া সাত বছর পর ঘোষিত এ কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের নাম আছে। কমিটি ঘোষণার পরপরই শহরের টেম্পল সড়কে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। ওই ভবনে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সব সংগঠনের কার্যালয়। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ওই ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেন।
নতুন কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া তৌহিদুর রহমান সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা কখনো বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই-সংগ্রামে অংশ নেননি, কখনো ছাত্রলীগের আদর্শিক রাজনীতি করেননি, তাঁদের নিয়ে ঘোষিত কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত দুর্বার আন্দোলন চলবে। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আল-মাহিদুল ইসলামকে জেলা ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে কেউ কখনো দেখেননি। তিনি জেলা ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্যও নন। তাঁর বাড়ি আদমদীঘি উপজেলায় হলেও ঢাকায় থাকেন তিনি। তাঁর বাবা স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি। প্রভাবশালী এক নেতার আস্থাভাজন হওয়ায় আল-মাহিদুল পদ বাগিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া মাহফুজার রহমান বলেন, একটি অযোগ্য কমিটি দেওয়া হয়েছে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। অযোগ্য কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে।
অভিযোগের বিষয়ে নবগঠিত কমিটির সভাপতি সজীব সাহা বলেন, আগের কমিটিতেই তিনি একটি পদে ছিলেন। পদ পাওয়ার আগেও তিনি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে সব কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। তবে এখন যাঁরা পদবঞ্চিত বলে আন্দোলন করছেন, তাঁরাই তো আগের কমিটিতে কোনো পদে ছিলেন না। আর সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আল-মাহিদুল আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের সংক্ষুব্ধ একটি পক্ষ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছে। যেকোনো কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীদের ক্ষুব্ধ অংশের প্রতিক্রিয়া জানানো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তাঁদের শান্ত করার জন্য আলোচনা চলছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।