দীর্ঘ ২৮ বছর পর বহুল আলোচিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি শেষ হয়েছে। আদালত পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদীর নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করে মামলাটি অবসানের আদেশ দেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটির জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগম মুক্তা এ আদেশ দেন।
কল্পনা চাকমা অপহৃত হলেও কে বা কারা করেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে আদালত পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনই বহাল রেখেছেন। প্রতিবেদনে কারও দায় পাওয়া না যাওয়ায় ২৮ বছর আগের মামলাটির অবসান হচ্ছে। তবে মামলার বাদী কল্পনার চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা আদালতের এ আদেশে ক্ষুব্ধ। তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
মামলার আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মামলার শুনানিতে বাদীর বক্তব্যও শোনেন আদালত। পরে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বাদীর নারাজি আবেদন প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবেদন নথিভুক্ত করেন। এর মাধ্যমে ২৮ বছর চলার পর মামলাটি সমাপ্তি ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুপারের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৃত আসামিদের নাম উল্লেখ না করে সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দায়মুক্ত করা হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাইল্যাঘোনায় নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন কল্পনা চাকমা। পরদিন কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় অপহরণের মামলা করেন। প্রথমে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। পরে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য রাঙামাটির পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেন। ২০১৬ সালে মামলার ৩৯তম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার।
পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কল্পনা চাকমা অপহৃত হলেও কে বা কারা করেছে, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন জানিয়ে মামলার অধিকতর তদন্তের দাবি জানান বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা। নারাজি আবেদনের ওপর দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুনানি চলে আদালতে। অবশেষে গতকাল পূর্বনির্ধারিত শুনানির দিনে আদালত পুলিশ সুপারের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।
মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা আদালতের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এই বিচারে অসন্তুষ্ট। তিনি উচ্চ আদালতে গিয়ে আবার আবেদন করবেন।
আদালত পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সহযোগী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন। গতকাল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য এন্টি চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আদালতের মাধ্যমে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ পক্ষপাতদুষ্ট ও চিহ্নিত অপহরণকারীদের দায়মুক্তি দেওয়ার ন্যক্কারজনক নজির, যা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এমন পক্ষপাতদুষ্ট পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিবাদী জনতা লড়াই চালিয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনাটি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। ঘটনাটি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি করলে সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল।