ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে জেলার সব জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
আজ বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলার ৪৬ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। তবে আজ সন্ধ্যার মধ্যে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলীরা।
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করে। এ সময় জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের লাইনের ওপর পড়ে।
এতে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন, যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। হেলে পড়েছে ৪৫টি খুঁটি, সঞ্চালন লাইনের ইনসুলেটর ভেঙেছে ৭৪টি, ২৮টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, ৪৭০টি মিটার ভেঙেছে, ৩১৫টি স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৬৫০টি স্থানে সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ ও বাঁশ ভেঙে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব লাইন সচল করতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১২৫টি দল মাঠে কাজ করছে। জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক আছেন ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩৫০ জন। তাঁর মধ্যে ৪৬ হাজার ৫০০ গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন। এর অধিকাংশই গ্রামের বাসিন্দা।
ভেদরগঞ্জের সখীপুর এলাকার বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন ছৈয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার সকাল থেকে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রাতে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে।’
নড়িয়ার ফতেজঙ্গপুর বাজারের ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। দোকানের ফ্রিজে থাকা পণ্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না করা গেলে অনেক লোকসান হবে।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল দিনভর কাজ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজা, শেখ রাসেল সেনানিবাস, ৮টি ৩৩ কেভি ফিডার, ১৪টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র, ৭৪টি ১১ কেভি ফিডার চালু করেছেন।
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জুলফিকার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। ঝড়ের তীব্রতার কারণে সোমবার রাতে বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
তবে গতকাল সারা দিন কাজ করে অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো ৪৬ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। আজ সন্ধ্যার মধ্যে ওই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।