সিলেট নগরের বুক চিরে প্রবাহিত সুরমা নদীর পাড়ে অন্তত ৯টি স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে। তীরের বাসিন্দারা এসব ময়লা ফেলছেন বলে স্বীকার করেছেন। আবর্জনা ফেলায় সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের মাছিমপুর থেকে কানিশাইল পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটারে নদীপাড়ের অন্তত ৯টি স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। জায়গাগুলোতে পচা ও উচ্ছিষ্ট খাবার, কলার কাঁদি, নারকেল ও সুপারির বাকল, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য, পরিত্যক্ত বস্তা, প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের খালি প্যাকেটসহ বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্যে ভরে আছে। পাড় থেকে সেই ময়লা নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে, মশা-মাছি উড়ছে। এতে নদীতীরের বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছে।
দিন-রাত সমানতালে প্রকাশ্যে আবর্জনা ফেলে নদীদূষণ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ময়লা-আবর্জনার মাধ্যমে সুরমা নদী দূষিত হচ্ছে। এমনকি প্লাস্টিক সামগ্রী তলদেশে জমে নাব্যতা হারাচ্ছে নদী। সিটি কর্তৃপক্ষ একটু কঠোর হলেই নদীর পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলার বিষয়টি রোধ হতে পারে।
তীরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নদীতীরের মুষ্টিমেয় বাসিন্দা পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। তাঁদের কারণে এলাকার পরিবেশ ও সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে। আবর্জনা অপসারণে নিয়মিত উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতামূলক বৈঠক করা গেলে কার্যকর সমাধান পাওয়া যেতে পারে।
ঝালোপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুন্সি আবদুল হক বলেন, চাঁদনীঘাট অংশে মানুষজন আবর্জনা ফেলার পাশাপাশি নিয়মিত প্রসাব-পায়খানা করে। এতে পুরো এলাকা দুর্গন্ধ থাকে। এ ছাড়া সুরমা নদীর পাড়ে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা ফেলে রাখায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এসব এলাকার আবহাওয়াও তাই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদীতীরের নগর অংশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে নগরের মাছিমপুর, কালীঘাট, ঝালোপাড়া, চাঁদনীঘাট, কাজিরবাজার ও শেখঘাট অংশে। এসব এলাকায় ময়লা গড়িয়ে পানিতে পড়ছে। এতে এসব স্থানে সুরমা নদীর পানি অনেকটা পচা ও কালচেও হয়ে আছে। এ ছাড়া নদীর তলদেশ প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্যে ভরাট হয়ে স্থানে স্থানে চরও জেগেছে।
ভুক্তভোগী নগরবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নদীতীরের অনেক অংশ অনেকটাই ছোটখাটো টিলার মতো হয়ে পড়েছে। এসব স্থান থেকে সারাক্ষণ উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। নিয়মিত কুকুর, বেড়াল এসে এসব আবর্জনা ঘাঁটাঘাঁটি করার কারণে দুর্গন্ধ আরও বাড়ে। এ ছাড়া আবর্জনাকেন্দ্রিক আশপাশের এলাকায় মশার উপদ্রবও বেশি। এসব আবর্জনা অপসারণে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযানও পরিচালনা করে না। এতে দুর্ভোগ সহ্য করেই আশপাশের বাসিন্দাদের বসবাস করতে হচ্ছে।
যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মো. একলিম আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরপর নদীতীরের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়ে থাকে। নিয়মিতই ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়। কেউ যেন আবর্জনা না ফেলেন, সেজন্য সিটি করপোরেশন সচেতনতাও চালিয়ে থাকে। আশপাশের মানুষজন সচেতন না হলে এটা রোধ করা একটু কঠিন।