গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা। গত বৃহস্পতিবার রাঙামাটির নানিয়ারচরের খারিক্যাংয়ে
গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা। গত বৃহস্পতিবার রাঙামাটির নানিয়ারচরের খারিক্যাংয়ে

থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো কমলা, যেখানে গেলে দেখা যাবে এমন দৃশ্য

ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা। দূর থেকে মনে হয়, গাছের পাতার ফাঁকে আলো জ্বলছে। কমলার বাগান দেখতে ভিড় করেছেন মানুষ। ছবি তুলছেন অনেকে। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার নানিয়ারচর ইউনিয়নের দোসরপাড়ায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক ঘেঁষে তৈ–চাকমা ছড়ায় এই কমলার বাগান। বাগানের মালিক তৈ-চাকমা মৌজার প্রধান হেডম্যান সুদত্ত চাকমা।

গত শুক্রবার সুদত্ত চাকমা ঘুরে দেখালেন তাঁর বাগান। সুদত্ত চাকমা বলেন, ‘চার বছর আগে কমলার চাষ শুরু করেছি। তবে আমার উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ে চায়না কমলা চাষ করা। আমার বাগানে আট শতাধিক কমলার গাছ আছে। তার মধ্যে ১৭টি চায়না কমলার গাছে এবার অনেক কমলা এসেছে। প্রতিটি কমলার গাছে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মণ কমলা ধরেছে। চায়না কমলা নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ রয়েছে।’

সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও রসে ভরা রাঙামাটির চায়না কমলার খ্যাতি ছড়িয়েছে স্থানীয় বাজার ও দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ছয় মাস আগে যখন কমলার গাছে ফুল ও ফল আসা শুরু করে, তখন এক মৌসুমের ফল বিক্রি করেন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। এরপর গত ২১ নভেম্বর আরও এক ব্যবসায়ীর কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ফলন আসা কমলা বিক্রি করেন। স্থানীয় বাজারে চায়না কমলা বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজিতে।

এক মৌসুমের সুদত্ত চাকমার বাগানের কমলা কিনেছেন শান্তি চাকমা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কমলার বাগানটি সম্ভাবনাময় দেখে এক মৌসুমের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে কিনে নিয়েছি। গত বর্ষার সময় তৈ–চাকমা ছড়ার পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দফা বাগানটি পানিতে তলিয়ে যায়। তবে দীর্ঘ সময় পানি স্থায়ী থাকেনি। তখন আমরা আতঙ্কে ছিলাম, যদি গাছগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে অনেক পরিচর্যার মাধ্যমে ভালো ফলন এসেছে।’

২০১৬ সাল থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষ্যং ও বুড়িঘাট ইউনিয়নে স্থানীয় কমলার ব্যাপক চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, লংগদু ও জুরাছড়ি উপজেলায় চাষ হচ্ছে কমলার। চলতি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ১০০ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নানিয়ারচর উপজেলায় চাষ হয়েছে ৬০০ একর জমিতে। এসব বাগান থেকে ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কমলা উৎপাদন হওয়ার কথা। এবার প্রায় ২১০ কোটি টাকার কমলা বিক্রি হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

গাছ থেকে কমলা পেড়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক শ্রমিক। গত বৃহস্পতিবার রাঙামাটির নানিয়ারচরে

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এখানে চায়না, দার্জিলিং ও স্থানীয় জাতের কমলা চাষের উপযোগী মাটি আছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে সেচের অসুবিধার কারণে সব স্থানে কমলা চাষ করা যাচ্ছে না। হেডম্যান সুদত্ত চাকমার কমলার বাগানে চায়না কমলার বেশ ফলন হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে চাষ করা হলে চায়না কমলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।