টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জোয়াহেরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রনি আহমেদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন।
পথসভায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকা প্রতীকে ভোট চান। এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলেও একই ইউনিয়নের তুরুপ বাজারের একটি পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রনি আহমেদ সম্পর্কে সংসদ সদস্যের ভাগনে।
ইউপি (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ২২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি; অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম বিধি না মেনে হাতীবান্ধা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন।
জানতে চাইলে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সিহাব উদ্দিন সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
১৭ জুলাই সখীপুর উপজেলার হাতীবান্ধাসহ চারটি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। হাতীবান্ধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়া আরও চারজন প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একজন, আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ দুজন ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পথসভার বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রনি আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার হজ থেকে ফিরেছেন সংসদ সদস্য। তিনি দোয়া চাইতে ও হজ-পরবর্তী নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছিলেন। এতে কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নেতা-কর্মীদের বহর নিয়ে হাতীবান্ধা ইউনিয়নের তক্তারচালা বাজারের গোলঘরে প্রথম পথসভায় অংশ নেন টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম। এরপর তিনি টেকিপাড়া বাজারের পথসভায় বক্তব্য দেন। ওই পথসভা শুরুর আগে অনুষ্ঠানের ছবি না তুলতে মাইকে সবাইকে নিষেধ করা হয়। প্রথম আলোর প্রতিনিধিসহ কাউকে পথসভার কোনো ছবি তুলতে দেননি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ওই পথসভার ছবি তুলতে গেলে স্থানীয় এক নেতা তাঁর ফোনটি কেড়ে নিয়ে সব ছবি মুছে দিয়ে ফোনটি আবার ফেরত দেন।
সংসদ সদস্য হয়েও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শাজাহান খান রবিন (মোটরসাইকেল) প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) হুমায়ুন আহমেদ বলেন, সংসদ সদস্য এভাবে নৌকার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নৌকা প্রতীকের কর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র দখল করে নেবে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।