রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। লাখো মুসল্লির ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুত দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান। ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কমিটি। কাল সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় দেশের অন্যতম বড় এই ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহৎ এই ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা সামশুল আলম কাশেমী। গতবারের মতো এবারও গোর-এ-শহীদ ময়দানে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাত্র সাত বছর আগে ২০১৭ সালে ঈদগাহের মিনার তৈরির পরে দেশের অন্যতম বৃহত্তম ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি পায় গোর-এ-শহীদ বড় মাঠ। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ মুসল্লি এই মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ২০১৭ সালের আগেও এখানে ঈদের জামাত হতো। ছোট একটি মিম্বার ছিল। আশপাশের মানুষ নামাজ আদায় করতেন। তবে মিনার প্রতিষ্ঠার পরে লোকসমাগম বেড়েছে। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি জেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের কাছেও মিনার আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ মাঠের আয়তন ২২ একর। খেলাধুলা ও নির্মল আড্ডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এ মাঠেই হয়। মাঠের পশ্চিমে লাল খয়েরি আর সাদা রঙের মিশ্রণে ৫১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সুউচ্চ মিনারটির সৌন্দর্য যে কারও নজর কাড়ে। প্রথম বছর প্রায় ছয় লাখ মুসল্লির ঈদুল ফিতরের নামাজে উপস্থিতির পর মাঠের গুরুত্ব বাড়ে।
জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, এবারও সর্বোচ্চসংখ্যক মুসল্লির জন্য নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে ছোট পরিসরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ঈদগাহের মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। এরপর জেলা পরিষদ ও সংসদ সদস্য মিনার নির্মাণে অর্থায়ন করেন। মিনারটি মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি করা হয়েছে। মেহরাবের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট মিনার। এর মধ্যে দুই প্রান্তে দুটি মিনারের উচ্চতা ৬০ ফুট। মাঝের দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট আর টাইলস করা মেহেরাবের উচ্চতা ৪৭ ফুট। এতে খিলান আছে ৩২টি। প্রতিটি গম্বুজে বৈদ্যুতিক বাতি আছে। মসজিদে নববি, কুয়েত ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্থাপনার আদলে তৈরি মিনারটির নির্মাণকাজে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল।
গতকাল শনিবার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, দুই শতাধিক শ্রমিক মিনার ধোয়ামোছা ও মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। নির্দিষ্ট দূরত্বে চুন ছিটিয়ে সারি তৈরির কাজ চলছে। মাঠের চারপাশে ১৭টি প্রবেশপথ, চারটি ওয়াচ টাওয়ার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য ৩০০টি অজুখানা, ৪০টি টয়লেট ও ৫টি স্থানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মিনারের পাদদেশে হ্যালোজেন লাইট লাগানো হয়েছে।
শনিবার দুপুরে ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি দেখতে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
এ সময় হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ আর নেই। এখানে দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দূরদূরান্তর মুসল্লিদের জন্য ঠাকুরগাঁও থেকে একটি ও পার্বতীপুর থেকে একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে কয়েকটি কমিটি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে দুটি চিকিৎসক দল কাজ করবে।
দিনাজপুর রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, ঈদের দিন সকাল ছয়টায় পার্বতীপুর রেলস্টেশন থেকে একটি ও ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন থেকে ভোর পাঁচটায় একটি বিশেষ ট্রেন ছাড়বে দিনাজপুরের উদ্দেশে। ঈদের নামাজ শেষে সকাল সাড়ে নয়টায় ট্রেন দুটি ফেরত যাবে। পথে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন দুটি দাঁড়াবে।
ঈদগাহের নিরাপত্তা জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে ঈদগাহে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। ঈদগাহ মাঠে ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া মাঠের মধে৵ ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টেও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।