শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে পিনাকি গ্রুপের এই কারখানাটিতে গত বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা
শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে পিনাকি গ্রুপের এই  কারখানাটিতে গত বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা

টানা ৪ দিন ধরে ৮ কারখানা বন্ধ, বিপাকে মালিকেরা

 বিভিন্ন দাবিতে চলা শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে গাজীপুরে টানা ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ৮টি কারখানা। কারখানাগুলোর উৎপাদন দাঁড়িয়েছে শূন্যের কোঠায়। এতে শ্রমিকদের চলতি মাসের বেতন, কারখানার খরচসহ আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে কারখানামালিকেরা পড়েছেন বিপাকে। তাঁরা পার করছেন কঠিন সময়।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে শ্রমিক অসন্তোষ। এতে একধরনের অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয় শিল্পনগর গাজীপুরে। দাবি আদায়ে কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। ঝামেলা এড়াতে গত বুধবার গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মোট ৮টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় ৩০টি কারখানায়। এর মাঝে ছুটি ঘোষণা করা কারখানাগুলো চালু হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ৮টি কারখানা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রীপুরের অ্যা¯্রাটেক্স লিমিটেড ও আনোয়ারা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানা, জয়দেবপুরের অ্যাপারেলস-২১ লিমিটেড, এস এম নিটওয়্যার লিমিটেড, কনফিডেন্স টেক্স ওয়্যার লিমিটেড, গ্রীন ফাইবার কম্পোজিট লিমিটেড কারখানা, গাছার ফুল এভার বিডি লিমিটেড এবং বাসনের বেসিক ক্লোথিং লিমিটেড কারখানা। সবগুলো কারখানাই বন্ধ করা হয়েছে শ্রম আইন ১৩–এর ১ ধারায়।

কারখানামালিকেরা বলছেন, শিল্পক্ষেত্রে প্রতিটা দিন তাঁদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে কারখানার সামগ্রিক আয়, শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় খরচ। এর মধ্যে কোনো কারণে ১ দিন উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকলে বা সময়মতো মালামাল শিপমেন্ট দিতে না পারলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ বা অন্যান্য খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। পাশাপাশি রয়েছে ক্রয়াদেশ হারানোর ঝুঁকি। কিন্তু এর মাঝেই ৪ দিন ধরে বন্ধ রাখতে হচ্ছে কারখানাগুলো।

জয়দেবপুরের এস এম নিটওয়্যার লিমিটেডের পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কারখানার বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শ্রমিক। কোনো কারণে ১ দিন কাজ বন্ধ থাকলে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। সে জায়গায় ৪ দিন ধরে আমাদের কারখানা বন্ধ। কারখানা চালুর পরও এ ক্ষতি পোষাতে অনেক দিন সময় লেগে যাবে।’  

একই ভাষ্য অন্যান্য কারখানামালিকদের। এর মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি কারখানামালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী মাসের (অক্টোবর) ৭ তারিখ হলেই শ্রমিকেরা চলতি মাসের বেতনের জন্য বসে থাকবেন। ওই দিন বেতন দিতে না পারলেই আবারও শুরু হবে আন্দোলন। এটা আমাদের শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিরাট সংকট।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর মালিকেরা বিজিএমইএর সঙ্গে মিটিং করছেন। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলেই কারখানাগুলো পুনরায় চালু হবে। আমরা তাঁদের সব রকম সহযোগিতায় প্রস্তুত আছি।’

সারওয়ার আলম আরও বলেন, মূলত একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে ওই কারখানার শ্রমিকেরা আশপাশের অন্যান্য কারখানাগুলোতেও ইটপাটকেল বা ভাঙচুর চালান। এসব কারণে অনেক মালিক কারখানা বন্ধ রাখেন।


আজও বন্ধ দুই কারখানা

আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করতে না পারায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় গত শুক্রবার রাতে নগরের মোগরখাল এলাকায় ‘টি এন জেট অ্যাপারেলস লিমিটেড’ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার সকালে কারখানা বন্ধ পেয়ে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে আরও শ্রমিক জড়ো করতে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন পাশের ‘ইকো কোটিউর লিমিটেড’ কারখানায়। পরে হামলা ও ভাঙচুরের শঙ্কায় ওই কারখানাটিও ছুটি ঘোষণা করা হয়।

টি এন জেট অ্যাপারেলসের পরিচালক (অপারেশন) মো. মহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯ আগস্ট আমাদের বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংকঋণ–সংক্রান্ত ঝামেলায় ওই দিন বেতন দিতে পারিনি। আমরা ১৯ আগস্ট বেতন দেব বলে জানাই। কিন্তু শ্রমিকেরা এটা না মেনে ৯ আগস্ট থেকেই কারখানায় এসে বসে থাকতেন। পরে বাধ্য হয়েই শুক্রবার রাতে বন্ধের নোটিশ দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।’  

তবে মো. ইকরামুল হাসান নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘কোনো মাসেই স্যাররা নির্ধারিত সময় আমাদের বেতন দিতে পারেন না। প্রতি মাসেই বেতনের লাইগ্যা আন্দোলন করতে অয়।’