মাদারীপুরের কালকিনিতে ভাই-বোনকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটেছে। ‘নৌকায় ভোট দেওয়ায়’ প্রতিপক্ষের লোকজন এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা। পুলিশ বলছে, পূর্বশত্রুতার জেরে এ হামলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে নির্বাচনের আগে-পরে নৌকা ও ঈগলের অনুসারীদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ, হত্যাকাণ্ড, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকার বেশির ভাগ গ্রাম এখনো প্রায় পুরুষশূন্য।
আহত ব্যক্তিরা হলেন লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মধ্য লক্ষ্মীপুর গ্রামের মিরাজ সরদার (৪০) ও তাঁর বড় বোন আমিরন বেগম (৫৫)। তাঁরা মাদারীপুর-৩ (সদর একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসনের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের সমর্থক। অপর দিকে অভিযুক্ত শাজাহান সরদার বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগমের কর্মী।
পুলিশ ও আহতের স্বজনদের সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় নিজ জমিতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন মিরাজ সরদার ও আমিরন বেগম। মাঝপথে আগে থেকে ওত পেতে থাকা প্রতিপক্ষ শাজাহান সরদার ও তাঁর লোকজন দুজনের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ স্বজনদের। এ সময় দুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
প্রথমে দুজনকে উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহমুদ বলেন, আহত দুজনের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের বড় চিহ্ন রয়েছে। বিশেষ করে মিরাজের দুই পা কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত ব্যক্তির বড় ভাই রেজাউল হক সরদার বলেন, ‘আমরা নৌকায় ভোট দিয়েছিলাম। সংসদ নির্বাচনে নৌকা হেরে যায়। এর পর থেকে বিজয়ীদের লোকজন আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। পূর্ব থেকে পরিকল্পনা মোতাবেক আমার ভাই–বোনের ওপর শাজাহান ও তাঁর লোকজন হামলা চালিয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
জানতে চাইলে শাজাহান সরদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিজয়ী প্রার্থীর অনুসারী। আমরা কেন মারামারি করতে যাব? মিরাজ ও তাঁর বোন আমিরনের ওপর হামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। রাজনৈতিক কারণে আমাদের নাম দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’ এ ঘটনার সঙ্গে বিজয়ী তাহমিনা বেগমের কোনো কর্মী জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌসুমি হক বলেন, নৌকার পক্ষে নির্বাচন করায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা প্রতিনিয়ত হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি করছেন। মিরাজ সরদার ও তাঁর বোনকে কুপিয়ে জখম করা হলো। মিরাজের তো দুই পায়ের রগ কেটেছে। এ ঘটনা আর কত ঘটবে? আমরা এলাকায় শান্তি চাই। হানাহানি বন্ধ চাই।’
নির্বাচন সহিংসতার কোনো বিষয় এখানে নেই বলে দাবি করেছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির। তিনি বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।