চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটে আজ থেকে দুই বছর আগে। ২০২২ সালের ৪ জুন রাতে বিস্ফোরণের ঘটনায় অঙ্গার হয়ে যান ডিপোর আইসিটি সুপারভাইজার আবদুচ সোবহান রহমান (২৮)। তাঁর মেয়ে ফাইজার বয়স তখন ছিল ১১ মাস। মেয়ের ডিএনএ পরীক্ষা করে এক মাস পর বাবার লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
ফাইজার বয়স এখন প্রায় ৩ বছর। হাঁটাচলার পাশাপাশি সে কথা বলতেও শিখেছে। কিন্তু সে জানে না তার বাবা নেই। বিদেশে থাকা চাচা আবদুর রহিমকে এখন বাবা বলে ডাকে ফাইজা। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়নের মোশাররফ আলী সিকদার বাড়িতে মা ও দাদির সঙ্গে থাকে ফাইজা।
নিহত আবদুচ সোবহানের স্ত্রী ইস্পাহান সুলতানার সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার দেবর শাশুড়ির জন্য সংসার খরচের টাকা পাঠায়। সেই খরচেই আমাদের চলতে হয়। শাশুড়ির সঙ্গে মেয়েকে বুকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। মোবাইলে কথা বলার সময় চাচাকে “বাবা”, “বাবা” বলে ডাকে মেয়ে। কীভাবে দিন কাটছে, একমাত্র আল্লাহ জানেন। শাশুড়ি ও দেবর না থাকলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতাম, তা ভাবতেই ভয় করে।’
ইস্পাহান সুলতানা বলেন, ঘটনার পর কোম্পানি ১০ লাখ টাকা অনুদান দেয় তাঁদের। পরে আরও ১১ মাস কোম্পানি থেকে তাঁর স্বামীর বেতনের একটি অংশ দেওয়া হয়। এরপর আর টাকা আসেনি, কোনো খোঁজখবর রাখেনি কেউ।
বিএম ডিপো থেকে সে দিন রাত সাড়ে ১০টার সময় মা, বোন ও স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন আবদুচ সোবহান রহমান। কথা বলার একপর্যায়ে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। বিস্ফোরণের পর সোবহানের লাশ তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। এক মাস পরে ৭ জুলাই ১১ মাস বয়সী ফাইজার ডিএনএ পরীক্ষা করে তাঁর লাশ শনাক্ত করা হয়।
আবদুচ সোবহানের মা লুৎফুন্নেছা বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে ছিল সোবহান। পরিবারের সব দায়িত্ব বড় ছেলের কাঁধে ছিল। আজ দুই বছর ধরে ছেলেকে ছাড়া দিন কাটে আমাদের। অনেক আশা ছিল ছেলেরা পুরোনো বেড়ার ঘরটি পাকা করবে। কিন্তু তা হলো না। আদরের ছেলেটি মারা গেল। এখন ছোট ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়।’
আবদুচ সোবহান রহমান ছাড়াও বিএম ডিপো বিস্ফোরণের ঘটনায় বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আরও চারজন মারা যান। তাঁরা হলেন পুঁইছড়ি ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার নাজিম উদ্দীন, নাপোড়া গ্রামের পূর্ব চালিয়াপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন ও তোফায়েল ইসলাম এবং ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের মমিনুল হক।
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মীসহ ৫১ জনের প্রাণহানি হয়। এ ঘটনায় আহত হন দেড় শতাধিক। অগ্নিনির্বাপণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় চার দিন।