সাদ আবরাহ
সাদ আবরাহ

মায়ের গয়না বিক্রি করে কলেজে ভর্তি হলেও কাটছে না দুশ্চিন্তা

মায়ের কানের দুল বিক্রি করে ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি হয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার অদম্য মেধাবী সাদ আবরাহ। রাজধানীর কলেজে ভর্তিই যেন তার গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মায়ের গয়না ও একটি সংস্থার সহায়তায় কলেজে ভর্তি হলেও ঢাকায় পড়াশোনা করা নিয়ে সাদ ও তার পরিবারের দুশ্চিন্তা কাটছে না।

সাদ আবরাহ চলতি বছর শেরপুরের কুহাকান্দা এস হক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের আনিসুজ্জামানের ছেলে। আনিসুজ্জামান-নাছিমা দম্পতির ঘরে দুই মেয়ের বাইরে সাদই একমাত্র ছেলে। ছেলের পড়াশোনা নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনিসুজ্জামান পেশায় বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। সামান্য বেতনে তাঁর সংসার চলত। ২০২০ সালে হঠাৎ আনিসুজ্জামানের ডান পা অবশ (পক্ষাঘাতগ্রস্ত) হয়ে যায়। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু তত দিনে শিক্ষকতার চাকরিটি হারান তিনি। এর পর থেকে বাড়িতে বাড়িতে পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিউশনি করিয়ে তিনি সংসার চালান। ১০ বছর আগে ৪০ শতক আবাদি জমি বন্ধক রেখে তিনি বড় মেয়ের বিয়ে দেন। ছোট মেয়ে শেরপুর সরকারি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন।

সাদের পরিবার জানায়, সাদ আবরাহ এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর কলেজের ভর্তির জন্য নটর ডেম কলেজসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে। ৩ জুন ফলাফলে নটর ডেমে ভর্তির জন্য বিবেচিত হয় সে এবং ভর্তির শেষ সময় দেওয়া হয় ৬ জুন। ভর্তির জন্য প্রয়োজন ছিল ২১ হাজার ১৩৫ টাকা। অল্প সময়ে এত টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাধ্য হয়ে মা নাজমা বেগম ১৮ হাজার টাকায় নিজের কানের দুল বিক্রি করে দেন। বাকি টাকা ‘ডপস অর্গানাইজেশন’ নামের একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শাহিন মিয়া দেন। ভর্তি নিশ্চিত হলেও ঢাকায় ছেলের থাকা-খাওয়া ও পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বাবা আনিসুজ্জামান।

আনিসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নই। চাকরি হারিয়ে বাড়িতে বাড়িতে প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাই। ছেলেটার লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা। ভর্তির টাকা জোগাড় না হওয়ায় মায়ের কানের দুল বিক্রি করে দিয়েছে। মেয়েটা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। এখন ছেলেটা ঢাকায় কীভাবে থাকবে, খাওয়ার খরচ কীভাবে চালামু, কিছুই ভাবতে পারতেছি না।’ তিনি বলেন, কেউ একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিলে তাঁকে মানুষের কাছে হাত পাততে হতো না।

সাদ আবরাহ মুঠোফোনে বলে, তার বুয়েটে পড়ার খুবই ইচ্ছা। সুযোগ পেলে লেখাপড়া করে একজন প্রকৌশলী হতে চায়।

ডপসের প্রতিষ্ঠাতা শাহিন মিয়া বলেন, ‘সাদের পরিবার খুবই দরিদ্র। বাবার উপার্জন দিয়ে ঠিকমতো সংসারই চলে না। দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগান দিতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। কুহাকান্দা এস হক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. চাঁন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটা খুবই মেধাবী। দেশের ভালো একটি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সহযোগিতা পেলে সাদ ভবিষ্যতে খুবই ভালো করবে।’