এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা চলে গেছেন জেলার অন্য আসনের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী গণসংযোগ চালাতে।
রংপুর-৩ (সদর-সিটির আংশিক) আসনের নির্বাচন ঘিরে ভোটের মাঠ নিরুত্তাপ। নেই উৎসবের আমেজ। এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় মাঠে নেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও। অন্য আসনের মতো এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই। আর এক দিন পরই যে ভোট, তা নিয়ে উত্তেজনা নেই এলাকার মানুষের। তবে প্রচারণার শেষ দিনে মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ করেছেন প্রার্থীরা।
এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি গত সাত দিন গণসংযোগ, পথসভা করে যাচ্ছেন। তিনি তাঁর নিজ এলাকা ছাড়াও জেলার অন্য আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণাতেও যাচ্ছেন। তিনি ছাড়াও এ আসনে পাঁচ প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন হিজড়া আনোয়ারা ইসলাম (স্বতন্ত্র), সহিদুল ইসলাম (জাসদ), শফিউল আলম (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), আবদুর রহমান (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি) ও একরামুল হক (বাংলাদেশ কংগ্রেস)। তবে জি এম কাদের, আনোয়ারা ও সহিদুল ছাড়া প্রচারণার মাঠে তেমন কেউ নেই।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল। পরে তা প্রত্যাহার করে নেন দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে। তিনি বলেন, রংপুর-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা চলে গেছেন জেলার অন্য আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী গণসংযোগে। তবে এখানে ভোটার উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাহিগঞ্জ, রঘু, মেকুরা, সাতমাথা, দর্শনা, তামপাট, কাচারি বাজার এলাকাসহ আরও কিছু পাড়ামহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনের আমেজ নেই। তবে এলাকায় এলাকায় জি এম কাদেরের লাঙ্গল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিজড়া আনোয়ারা ইসলাম ওরফে রানীর ঈগল প্রতীকের কিছু পোস্টার ঝুলছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা আর গণসংযোগে আমি যেখানেই ছুটে গেছি, মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। আজ অনেক রাত পর্যন্ত ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগে ব্যস্ত থাকব। সব মিলিয়ে রংপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
কাচারি বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষজন জটলা করে গল্প করছিলেন। তাঁরা বলেন, এই আসনে নৌকার প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই। ভোটাররাও ঝিমিয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যেও ভোট নিয়ে নেই কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা।
কাচারি বাজারের হীরা রশিদ নামের একজন ভোটার বলেন, এবারের নির্বাচনে রংপুর-৩ সদর আসনে ভোট নিয়ে আলোচনা নেই। জাতীয় পার্টির প্রার্থী জি এম কাদের দলীয় লোকজন নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন সাধারণ ভোটারদের কাছে। কিন্তু তেমন কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই তাঁর। তবে আলোচনা আছে, হিজড়া প্রার্থীকে নিয়ে।
জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বলেন, জি এম কাদের গত শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে রংপুরে এসেছেন। সেদিন থেকে তিনি টানা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার বাইরে গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুর-৪, ৫ ও ৬ আসনে তিনটি পৃথক পথসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। রংপুর-৩ সদর আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভা করেছেন গতকাল সন্ধ্যার পর সিটি বাজার এলাকায়।
জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির জন্য। আমি নিজেও আমার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন পথসভায় ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সকাল সকাল ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, রংপুরে এখনো ভোটের পরিবেশ ভালো আছে।
জি এম কাদেরের সঙ্গে প্রচারণায় ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, মহানগর জাপার আহ্বায়ক ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর জাপার সদস্যসচিব এস এম ইয়াসির, জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা জাপার সদস্যসচিব আবদুর রাজ্জাকসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
রংপুর-৩ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন সহিদুল ইসলাম। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকলেও তেমন প্রচারণা জমিয়ে তুলতে পারেননি বলে জানান শহরের ভোটাররা। জাসদের প্রার্থী বলেন, ‘বিভিন্ন পাড়ামহল্লাসহ মানুষের সমাগমের স্থানে গণসংযোগ, পথসভা করছি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়।’
সহিদুল ইসলাম আরও বলেন, পথসভার থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন গণসংযোগে। গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত শহরের বাবু খাঁ, গণেশপুর, আদর্শপাড়া, কলেজ রোড, লালবাগ এলাকায় একাধিক স্থানে গণসংযোগ করবেন। তবে নির্বাচনের ফলাফল যেন কেন্দ্রেই ঘোষণা করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।