‘আমাকে জনগণ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। জানি না কখন কোন পথে আমার অবস্থান থাকবে। আমার নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত থাকবে। উচ্চাভিলাসী কিছুসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যে আচরণ শুরু করেছে, এতে আমি রীতিমতো আতঙ্কিত-শঙ্কিত। তারা আর কোনো কিছুর মধ্যে ফেলে দেয় কি না? আমার অন্যায়, আমি নগরবাসী দলমত–নির্বিশেষে নির্বাচিত হয়েছি।’
নিজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার প্রসঙ্গে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটায় নগর ভবনের সম্মেলনকক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব কথা বলেছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত ও শঙ্কিত রয়েছেন দাবি করে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি এ ধরনের পরিবেশ আশা করেননি। যেখানে ছয় বছর ধরে তাঁরা দায়িত্ব পালন করছিলেন, হঠাৎই রাতে তাদের প্রত্যাহার করা হয়। সিটি করপোরেশনে পরিষদ বসে রেজ্যুলেশন করে চুক্তিতে পেমেন্ট (টাকা দিয়ে) করে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন নিরাপত্তাকাজের জন্য ২৪ জন আনসার সদস্যকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন তাঁর বাসায় পালাক্রমে দুজন করে নিরাপত্তা দিতেন। তাঁর বাসায় ব্যক্তিগত ৯ সিটি করপোরেশনের গাড়ি, জরুরি কাগজপত্রও রয়েছে। কিন্তু রাতের আঁধারে আগে কোনোভাবে কাউকে অবহিত বা অফিশিয়ালি কোনো কিছু না জানিয়ে এমনটি করা হয়েছে।
আরিফুল হক বলেন, ‘টানা দুই দফায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। প্রথম দফায় সরকার দুজন “গ্যানম্যান” নিরাপত্তায় নিয়োগ দিলেও পরের দফায় দেয়নি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী মেয়রের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। দেশের অন্য মেয়রেরা এই সুবিধা পেলেও আমি বঞ্চিত হচ্ছি। এ জন্যই সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যথাযথ নীতিমালা মেনে আনসার সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য আবেদন করা হয়েছিল।’
নির্বাচন সামনে রেখে তাঁর পাশের মানুষজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এখন দেখা যায়, তিনি যেসব এলাকা বা ওয়ার্ডে যাচ্ছেন তাঁর পাশে যাদের ছবি থাকে, রাতে তাদের অনুসন্ধান শুরু হয়। গ্রেপ্তার হয়, কারাগারে পাঠানো হয়, রিমান্ড ঘোষণা করা হয়।
নিজেকে নগরের পাঁচ লাখ মানুষের প্রতিনিধি জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘ব্যক্তি আরিফ নয়, মেয়র কোনো দলের নয়, সবার মেয়র। সরকারের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংবিধানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শপথ নিয়ে সরকারের অংশ হয়েছি। জনপ্রতিনিধি সঙ্গে যে আচরণ করা প্রয়োজন, সে শালীনতাবোধ পর্যন্ত কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি সে যে–ই হোক, তাঁকে যদি অবমূল্যায়ন করা হয়, তবে সেটি জনগণকে অবমূল্যায়ন করা হবে। দেশের একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে যদি সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই, তবে রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে বাধ্য।’
এদিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তিনি নির্বাচনকে নিয়ে ভয় পান না। আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনকে ভয় পায় না। ২০ মে নগরবাসীর কথা শুনে সভা করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দল করতে হলে সেখান থেকে একচুল পরিমাণ নড়চড় করার সুযোগ নেই। দল করতে হলে এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিজের সিদ্ধান্তে যেতে হলে দলের আদর্শ থেকে বেরিয়ে এসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০ মে সমাবেশের ব্যাপারে পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে সিলেট জেলার আনসার ও ভিডিপির কমান্ড্যান্ট আলী রেজা রাব্বি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আনসার সদস্য নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। নগর কর্তৃপক্ষ নগর ভবনের নিরাপত্তা দিতে আনসার নিয়েছিল। বাসা বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আনসার নেওয়া যায় না। এর মধ্যে পাঁচজন আনসার সদস্য মেয়রের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও তাঁর বাসভবনে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। যোগদানের পর বিষয়টি জানতে পেরে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। মেয়রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচজন আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব আনসার সদস্য শুধু নগর ভবনে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের নগর ভবনে কাজ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। নগর ভবনে নিরাপত্তা দিতে তাঁরা কাজ করবেন, তবে কারও কোনো ব্যক্তিগত কাজ করবেন না।’
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট হবে আগামী ২১ জুন। মনোনয়নপত্র দাখিল করার শেষ দিন ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২ জুন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও দলটির মনোনয়ন নিয়ে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে।