সিলেটে সুরমা নদী থেকে উত্তোলন করা বালুর উন্মুক্ত নিলামে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে এ দরপত্র ডাকে অংশ নেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন লাঞ্ছিত হয়েছেন। পরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তাৎক্ষণিকভাবে নিলাম স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার বিকেল চারটার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এসব ঘটনা ঘটে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সিলেটের সুরমা নদী খনন করে উত্তোলন করা ৯টি স্থানের বালু উন্মুক্ত নিলাম ডাকা হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ৪ লাখ টাকা পে অর্ডার ব্যাংকে জমা দিয়ে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। সে হিসাবে ৩০০ জনের বেশি ব্যক্তি নিলাম কার্যক্রম অংশ নেয়।
নিলামে অংশগ্রহণকারী ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বালুর নিলাম ডাককে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকেই সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন কয়েক শ ব্যক্তি। তাঁদের অধিকাংশ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গতকাল বেলা তিনটার দিকে নিলামের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ডাকে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর হাঁকান কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন। প্রথম ডাক শেষে দ্বিতীয় ডাকেও তিনি দাম হাকাচ্ছিলেন। এ সময় অন্য ব্যক্তিরা তাঁর বিরুদ্ধে এককভাবে দাম বাড়ানোর অভিযোগ তোলেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শোরগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে নিজাম উদ্দিনকে চেয়ার থেকে ভিড়ের মধ্যে টেনে নিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়।
এর কিছু সময় পর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে আবার নিলাম কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু তখনোও হট্টগোলে জড়ায় উভয় পক্ষ। এতে নিলাম স্থগিত ঘোষণা করেন নিলাম আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব দীপক রঞ্জন দাশ।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা অভিযোগ করেন, নিজাম উদ্দিন চীনের এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে এই নিলামে অংশ নেন। দেশের ভেতর চীনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণকাজ করছে। তাঁদের প্রচুর পরিমাণে বালুর প্রয়োজন। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ করেই নিলামে দর হাকানো হচ্ছিল।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রথমটির নিলামের ডাকে তিনিই সর্বোচ্চ দাম হাকিয়েছেন। দ্বিতীয়টির ডাক শুরু হলে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে। নিলাম স্থগিতের বিষয়ে তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এ কারণে নিলাম কমিটি বন্ধ করেছে। তবে প্রথম নিলামটি তিনিই পেয়েছেন বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে নিলাম আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বালুর ৯টি স্থানের উন্মুক্ত নিলাম ছিল। প্রথম একটি স্থানের নিলামের পর অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নিলাম স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে দরপত্র আহ্বায়ক কমিটি নিলামের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।