‘আউজগা রাইত থাইক্কা কম্বল গাও দিয়া ঘুমাইয়াম’

নান্দাইলে চরভেলামারী ডিসি পার্ক এলাকায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। সােমবার ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড়ের চরে
ছবি: প্রথম আলাে

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ সোমবার ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরশ্রীরামপুর, চরভেলামারী ও বরুনাকান্দা গ্রামের হতদরিদ্র ও প্রতিবন্ধী শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আজ ৩টি স্থানে মোট ১২০টি কম্বল বিতরণ করা হয়।

বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চরশ্রীরামপুর (পূর্ব) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কম্বলের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী। তাঁদের একজন মোছা. রাশিদা আক্তার (৬৫)। তাঁর হাতে কম্বল তুলে দিতেই তিনি সেটি কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখেন। রাশিদা বলেন, ‘বাবা রে, শরীরে জোর পাই না। কোনো জায়গায় যেতে পারি না। তাই আমাদের কথা কেউ মনে রাখে না। আপনারা কম্বল নিয়া বাড়ির কাছে আইছুইন দেইখ্যা খুব বালা লাগতাছে।’

দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না একই গ্রামের বৃদ্ধ আবদুর রহিম (৭৫)। তাঁকে একটি চেয়ারে বসিয়ে কম্বল দেওয়া হলে তিনি আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। শীত নিবারণের জন্য সেধে কেউ কম্বল দেবে, সেটা আবদুর রহিম ভাবতে পারেননি। সজল চোখে কম্বল বিতরণকারীদের কাজ দেখার পর রহিম বলেন, ‘এবারে খুব শীত পড়েছে। একটি কম্বল খুব প্রয়োজন ছিল। আপনারা সেই প্রয়োজন মেটালেন।’

একটি কম্বল হাতে পেয়ে বুকে জড়িয়ে অশীতিপর বৃদ্ধা চন্দ্রভানু বলেন, ‘বাবা রে, কত দিন ছিঁড়া খেতা গাও দিয়া রাইত কাডাইছি। ঠান্ডায় শইলডা মাইরা আইত। আউজগা রাইত থাইক্কা কম্বল গাও দিয়া ঘুমাইয়াম। তোমরার বালা অউক।’

এর আগে উপজেলার চরভেলামারী গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ডিসি পার্ক এলাকায় কম্বল বিতরণ করা হয়। এই গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল বাশার একটি কম্বল পাওয়ামাত্রই গায়ে জড়িয়ে ওম নিতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘এবারের তীব্র শীতে আপনাদের কল্যাণে একটি কম্বল ভাগ্যে জুটেছে। এই কম্বলডা আমার অনেক উপকারে আসবে।’

নান্দাইলে চরভেলামারী ডিসি পার্ক এলাকায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। সােমবার ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড়ের চরে

সকালে নান্দাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম বরুণাকান্দা গ্রামের সুধীর চন্দ্র বর্মণ, বিউটি রানী সিং কম্বল পেয়ে হাত জোড় করে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের মঙ্গল কামনা করেন।

উপজেলার চরশ্রীরামপুর গ্রামে কম্বল বিতরণে সহায়তা করেছেন চরশ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, জালাল উদ্দিন। অন্যদিকে চরভেলামারী গ্রামের ডিসি পার্কে কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হাশেম, চরবেতাগৈর ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উদ্দিন। উপজেলার বরুনাকান্দা গ্রামে ছিলেন সমাজকর্মী অপু পাল।

গ্রাম ঘুরে হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষের তালিকা প্রণয়নে সহায়তা করেছেন শিক্ষক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, চরশ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক মো. মোখলেছুর রহমান ও বরুণাকান্দা আশ্রমের কর্মকর্তা অপু পাল।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা
বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।
ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্টে ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৮০৬ টাকা অনুদান এসেছে।